রংপুর নগরীতে একটি এলপিজি গ্যাস স্টেশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই কমিটি গঠন করা হয়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এডিএমকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পরিমল কুমার সরকার জানান, ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বর্তমানে সেখানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সিও বাজার এলপি গ্যাস স্টেশনে এই বিস্ফোরণ হয়। গ্যাস স্টেশনটি এক সপ্তাহ আগে লিকেজ হওয়ার কারণে বন্ধ ছিল। চালু করার জন্য গ্যাসের কূপের ওপরে ব্রয়লারে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করছিল মালিকপক্ষ। এসময় কূপে কোনো লিঙ্কেজ আছে কি না সেটি জানার জন্য বাতাসের চাপ দিলে এই বিস্ফোরণ হয়। ব্রয়লারের মধ্যে কোনো গ্যাস ছিল না। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হওয়ার কারণে বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট আশপাশের অন্তত দেড় কিলোমিটার এলাকার বাড়ি-ঘর পুড়ে যায়। এতে দুই শতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শতাধিক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আশপাশে মহাসড়ক দিয়ে যাওয়া অন্তত ২৫টি বাদসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্টেশনটির গ্যাস সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলা ছিল। ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় এই দুর্ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং অতিরিক্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
ফায়ার সার্ভিস পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আহতদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্যাস কূপ মেরামতের ইঞ্জিনিয়ারের সহযোগী সেলিম রেজা মারা যান এবং গুরতর আহত হয় আরও ১৩ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্যাস ট্যাংক বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতরা হলেন, অজ্ঞাত কিশোর (১৬), ছালেক শাহ (৬৫), তারাজুল (৪৫), আলমগীর (২২), সোহেল (৩৭), বিপুল (৫২), রফিক (৩৫), সোহাগ (২৭), বকুল (২৪), মজিবর (৪৫), অজ্ঞাত পুরুষ, সাদমান (১৮) ও রোজীকে (৫০) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, সার্জারি বিভাগ (পুরুষ ও মহিলা), নাক, কান, গলা বিভাগ ও নিউরো সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি বাসা থেকে বের হব, এমন সময় ভয়াবহ বিকট শব্দ হয়। সাথে সাথেই আমার বাড়ি ঘরের সমস্ত ৩৭ ফ্যানসহ অন্যান্যগুলো ভেঙে পড়ে। আমি কোনো মতো দৌড়ে প্রাণ বাঁচায়। বের হয়ে শুনি এলপিজি গ্যাস স্টেশনের ব্রয়লার বিস্ফোরণ হয়েছে। যদি সেখানে গ্যাস থাকতো তাহলে সেখানে আশপাশের শত শত মানুষের জীবন চলে যেত। ওই বাড়ির পাশেই ছিল চিকিৎসক মতিউর রহমানের বাড়ি। তার স্ত্রী পারুল বেগম জানান, ১০ দিন আগেও টাংকিতে পানি মারার কারণে কূপে লিঙ্কেজ হয়ে অন্তত ৪০০ লিটার গ্যাস বাষ্পায়িত হয়েছিল ওই স্টেশনটিতে।
মেরামতের পর আবারও চালু করার চেষ্টা করছিল তারা। এত বড় দুর্ঘটনার পরেও তারা সাবধানতা অবলম্বন না করেই কূপের মেরামত করার কারণেই বিস্ফোরণ হয়। এতে আমার বাড়ি ঘরের যা যাবতীয় জিনিস আছে সব নষ্ট হয়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের রংপুর ফায়ার স্টেশনের উপ সহকারী পরিচালক বাদশা মাসউদ আলম জানান, কূপের লিঙ্কেজ চেকআপ করতে গিয়েই মূলত এই ঘটনাটি ঘটেছে। এ কারণে আশপাশের যত বাড়ি-ঘর আছে দোকানপাট আছে সব কিছু না কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি নিরূপণের কাজ চলছে।
তিনি জানান, এই ঘটনায় স্টেশন মালিকের কোনো গাফিলতি ছিল কি না এটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।
অন্যদিকে সিও বাজার এলপিজি অটো গ্যাস অ্যান্ড কনভার্সন সেন্টারের ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আশপাশের ঘরবাড়ি এবং গাড়ি ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাপারে মালিক পক্ষের কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।