শিরোনাম
মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের সত্য কথাগুলো বলতে শুরু করলাম: ফজলুর রহমান নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনা: প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী নিহত, স্বামী আহত ডিসি মাসুদের বিরুদ্ধে প্রকৌশল শিক্ষার্থীকে গলা টিপে ধরার অভিযোগ আবরার ফাইয়াজের ১ হাজার ১ টাকায় মসজিদ ও মন্দিরকে জমি দিল সরকার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের ডিসিসহ বেশ কয়েকজন আহত রাণীশংকৈলে কুলিক নদীতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের গর্তে শিশু নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন শেখ হাসিনাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান, ভূতের মুখে রাম নাম : অ্যাটর্নি জেনারেল পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে আহত যুবকও ‘জুলাই যোদ্ধার’ তালিকায় কাউনিয়ায় ফলের দাম বেশি, কমেছে বিক্রি : হতাশায় ব্যবসায়ীরা সাংবাদিক থেকে গায়ক: আব্দুর রহমান ববিনের সুরের জাদু
বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

রংপুরের পীরগাছায় গবাদি পশু থেকে মানুষের দেহে ছড়াচ্ছে বিরল এক রোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর / ২০১৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রংপুরের পীরগাছায় গবাদি পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে বিরল প্রজাতির মারাত্মক এক রোগ। শরীরে প্রথমে ফুসকুড়ি হয়ে পরে ঘা হয়; এরপর তা থেকে তৈরি হয় গভীর ক্ষত।

এই রকম উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন মানুষ আক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দফতর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় সমস্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে। তবে এখনো প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় জনগণ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রংপুরের পীরগাছার সদর, তাম্বুলপুর, ছাওলা, পারুল, ইটাকুমারী ইউনিয়নসহ প্রায় পুরো উপজেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। সবচাইতে বেশি আক্রান্ত সদর, ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়ন।

এ নিয়ে পীরগাছা উপজেলা সদরের অনন্তরাম বড়বাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাবিনা আক্তার বলেন, গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগল লালনপালন করতেন তিনি। সপ্তাহ দেড়েক আগে হঠাৎ তীব্র জ্বরে অসুস্থ হয়ে মারা যায় একের পর এক পশু। অসুস্থ গবাদি পশুর সেবা করতে গিয়ে তিনিও আক্রান্ত হন অজানা রোগে।

তিনি আরও বলেন, ‘সপ্তাহ দেড়েক আগে হঠাৎ করেই একে একে সবগুলো গরু তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পশুগুলোকে সুস্থ করে তুলতে সব ধরনের চেষ্টা করেও বাঁচতে পারিনি। তিনদিনের মধ্যে তিনটি গরু ও চারটি ছাগল মারা যায়। পরে হঠাৎ দেখি আমার হাতে ফুসকুড়ির মতো কী যেন উঠতেছে। দুই দিন যেতেই সেই ফুসকুড়ি বড় ঘায়ে পরিণত হয়। এখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা করে, চুলকায়। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা চলছে।

সাবিনার মতো পুরো পীরগাছায় এ অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ। যাদের সবাই অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে ছিলেন অথবা অসুস্থ পশু জবাই করার পর মাংস স্পর্শ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, গত দেড় মাস ধরেই এমন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। এমনকি অসুস্থ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যাচ্ছে আক্রান্ত গবাদি পশুও। এতে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

এই বিরল রোগে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব জাহেদা বেগম বলেন, ‘১০ থেকে ১২ দিন আগে হঠাৎ ডান হাতের একটি আঙ্গুলে চুলকানি শুরু হয়। পরে আস্তে আস্তে ফুসকুড়ি হয়ে ঘা। এখন ওই জায়গার মাংস পচে গিয়ে কালো হয়ে গেছে। ভিতরে প্রচণ্ড জ্বালাপোড়া করে। নতুন করে আরও একটি আঙ্গুলে একইভাবে চুলকানি শুরু হয়েছে।’

এ বিষয়ে ছাওলা ইউনিয়নের কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘পশু অসুস্থ হলে তার পরিচর্যা করতে হয়। বেশি অসুস্থ হলে অনেকে জবাই করে বিক্রি করেন। সেই মাংস কিনে খাওয়ায় অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। খাওয়ার দু-চার দিন পর শরীরে বড় বড় ঘা হয়।’

তাম্বুলপুর ইউনিয়নের জয়নাল মিয়ার ভাষ্য, ‘তার চাচা গরু জবাই করে মাংস দিয়েছিলেন। তা ধুয়ে রান্না করায় তার স্ত্রীর হাতে ঘা হয়েছে। চাচার বাড়ির যারা মাংস নাড়াচাড়া করেছেন, সবাই আক্রান্ত হয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে পীরগাছা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে একটি ছাগলের প্রচণ্ড জ্বর আসে। অনেক চেষ্টার পরেও বাঁচার কোনো সম্ভাবনা না থাকায় ছাগলটাকে জবাই করি। ওই মাংস কাটাকাটি করার পরের দিন থেকে হাতে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠা শুরু হয়। পরে তা বড় ঘায়ে পরিণত হয়ে শেষের দিকে পচে যায়। অনেক ওষুধ খাওয়ার পর এখন একটু সুস্থ। স্থানীয় চিকিৎসক বলেছেন এটা নাকি অ্যানথ্রাক্স রোগ।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আঁখি সরকার জানান, প্রায় প্রতিদিনই এমন রোগে আক্রান্ত ৫ থেকে ৭ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। অনেক সময় একই পরিবারের সব সদস্য আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষা করা না হলেও অ্যানথ্রাক্স রোগের উপসর্গের সঙ্গে এই সংক্রমণের হুবহু মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ দিকে পুরো উপজেলায় এই রোগে সাধারণ মানুষ আক্রান্তের পাশাপাশি কয়েকশ’ গবাদি পশু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও নির্বিকার উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর।

স্থানীয়রা জানান, খামারিদের কাছে যাওয়া তো দূরের কথা এমন সমস্যা নিয়ে প্রাণিসম্পদ দফতরে গেলে বেশিরভাগ সময়ই কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। ফলে সঠিক চিকিৎসা না মেলায় মারা যাচ্ছে আক্রান্ত পশুগুলো। অন্যদিকে আক্রান্ত হলেই তড়িঘড়ি করে ওই পশুকে কম দামে হলেও বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। এতে খামারিরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি আক্রান্ত পশুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ