শিরোনাম
Blackjack Online for Enjoyable: An Overview to Taking Pleasure In the Classic Card Video Game এই সরকারের ব্যর্থতার ফলে আ. লীগের প্রত্যাবর্তন হতেও পারে: রুমিন ফারহানা মেয়ে সন্তানের বাবা হলেন মিরাজ মুই অ্যালা কী নিয়া বাঁচিম বাহে? মোর ছাওয়াক তুমরা ফিরি দ্যাও মামুনের খুলি ফ্রিজে, মাথার ব্যান্ডেজে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না’ তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে সহায়তা করবো: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা, ইউপি সদস্য বললেন ‘আমি বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী’ বগুড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে হামলার শিকার ভূমি কর্মকর্তা শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ- ডিসি মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান মিঠাপুকুরে চার দফা দাবিতে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ অপরাহ্ন

মুই অ্যালা কী নিয়া বাঁচিম বাহে? মোর ছাওয়াক তুমরা ফিরি দ্যাও

নিজস্ব প্রতিবেদক / ৩৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাঁশের তৈরি চাটাইয়ের বেড়া ও টিনে ছাওয়া দুই কক্ষের বাড়ি। এই বাড়ির বারান্দায় এক স্বজনের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজে পড়ে আছেন মোর্শেদা বেগম। তাঁর শরীরে স্যালাইন চলছে। তাঁকে ঘিরে আছেন কয়েক নারী। তারা নানান কিছু বলে মোর্শেদাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁর মন মানছে না। তিনি একটু পরপর চোখ খুলে আহাজারি করে বলছেন, ‘মুই অ্যালা কী নিয়া বাঁচিম বাহে? মোর ছাওয়াক তুমরা ফিরি দ্যাও। ওর বাদে মোকেও তুলি নেও আল্লাহ। হামাক আর কায় দেখিবে?

গত মঙ্গলবার নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন মোর্শেদা বেগমের ছেলে হাবিবুর রহমান (২০)। এর পর থেকে ছেলের জন্য কাঁদতে কাঁদতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একটু পরপর মূর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশী লিপি আক্তার বলেন, কেউ এলেই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন হাবিবুরের মা। বারবার ছেলের ছবি দেখতে চাচ্ছেন। ছবি দেখালে আরও বেশি কান্না করছেন। আমরা সবাই বোঝানোর চেষ্টা করেও বোঝাতে পারছি না।

নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কাজীরহাট গ্রামে হাবিবুর রহমানের বাড়ি। তাঁর বাবার নাম দুলাল হোসেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট হাবিবুর উত্তরা ইপিজেডে ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের নিটিং কারখানায় চাকরি করতেন। পাশাপাশি নীলফামারী বিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। চাকরির সামান্য বেতনে নিজে পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। বাকি টাকা মা-বাবাকে দিতেন। কিন্তু হাবিবুরের মৃত্যুতে তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে হাবিবুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন-প্রতিবেশী ভিড় করে আছেন। তারা জানান, হাবিবুরের বড় দুই ভাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজেদের মতো থাকেন। হাবিবুরের চাকরির বেতনেই মা-বাবা চলতেন। তাদের ভরসা ছিলেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করার স্বপ্ন ছিল হাবিবুরের। কিন্তু গুলিতে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে তাঁকে বাড়ির পাশের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। উত্তরা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছে। এ কারণে স্বজন মামলা করেননি বলে জানিয়েছেন।

হাবিবুর রহমানের সহকর্মী মিলন ইসলাম বলেন, বয়সে হাবিবুর আমার চেয়ে ছোট হলেও আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আমরা একসঙ্গে একই কারখানায় কাজ করি। সোমবার একসঙ্গে রাতে ডিউটি করে সকালে বের হয়ে দেখি এভারগ্রিন বিডি লিমিটেডের শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। নিরাপদ স্থানে যেতে আমরা সেখান থেকে দৌড় দিই। কিছুক্ষণ পর লোকমুখে জানতে পারি, হাবিবুর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। সে কোনো আন্দোলনে ছিল না। তাও তাকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো।

কান্নাজাড়িত কণ্ঠে হাবিবুরের বাবা দুলাল হোসেন বলেন, ছেলে আমাদের খুব খেয়াল রাখত। আমরাও তাকে আঁকড়ে ধরে বাকিটা জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম। ভাঙা টিনের চাল থেকে পানি পড়ত। এ জন্য কয়েক দিন আগে সে টিন কিনে এনে রেখেছিল। চাল আর ঠিক করা হয়নি। আমাকে সব সময় সান্ত্বনা দিয়ে বলত, তোমার দুই ছেলে ছেড়ে চলে গেলেও আমি কোনো দিন ছেড়ে যাব না। কিন্তু হাবিবুর কথা রাখেনি। সে আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে! আমার আদরের সন্তান রাতে কাজে বের হলো। সে আর কোনো দিন বাড়ি ফিরবে না। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে।

প্রতিবেশী আব্দুল মালেক বলেন, পরিবারটির অবস্থা ভালো নয়। বৃদ্ধ বাবা কোনো কাজ করতে পারেন না। মায়ের শারীরিক অবস্থাও ভালো না। মাসে অনেক টাকার ওষুধ লাগে। ছোট ছেলে হাবিবুরই তাদের ভরসা ছিল। কিন্তু সেও চলে গেল। পরিবারটাকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

সংগলশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মা-বাবার মুখে খাবার জোটাতে পড়াশোনার পাশাপাশি ইপিজেডের ইকু ইন্টারন্যাশনাল নামের কারখানায় চাকরি নেয় হাবিবুর। তার মৃত্যুতে মা-বাবা অসহায় হয়ে গেল।

নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নিহতের পরিবারকে কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তার সুযোগ নেই। তবে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সভা করে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নিহতের পরিবারকে তারা ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ দেবে। আর আহতদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে কারখানা কর্তৃপক্ষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ