রংপুরের মিঠাপুকুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত আফসার আলী মন্ডল (৭০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) নিজের জমিতে ধান লাগাতে গেলে তাকেসহ পাঁচজনকে প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার ০৮ নং চেংমারী ইউনিয়নের আবীরের পাড়া গ্রামের আফসার আলী মন্ডলের সঙ্গে পাশ্ববর্তী ১৩ নং গোপালপুর ইউনিয়নের শাল্টিপাড়ার শাহজাহান, সামছুল এবং মর্জিনা গং-দের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছিল। আফসার আলী মন্ডলের নামে জমির সমস্ত কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্ত্বেও লালমিয়া এবং মনজুরুল ইসলাম নামে স্থানীয় দুই ব্যক্তি শাহজাহান, সামছুল গং-দের উস্কে দিয়ে আফসার আলী মন্ডলের জমি দখলের চেষ্টা করেন।
আফসার আলী মন্ডল জমি রক্ষায় আদালতে ১৪৪/১৪৫ ধারার আবেদন করেন এবং আদালত উক্ত জমিতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেন। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিবাদীরা একাধিকবার জমি দখলের চেষ্টা চালান।
বুধবার (২৩ জুলাই) আফসার আলী মন্ডল জমিতে গাছ লাগাতে গেলে লালমিয়া এবং আওয়ামীলীগ নেতা মনজুরুল পাশ্ববর্তী আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি থেকে লোকজন নিয়ে এসে তাকে বাধা দেন। এরপর আফসার আলীর মেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে বসার পরামর্শ দেয়। রাতে উভয়পক্ষ উপস্থিত হলে পুলিশ জমির কাগজপত্র, আদালতের নির্দেশনা এবং দখল স্বত্ব অনুযায়ী শাহজাহান ও সামছুল গং-দের উক্ত জমিতে ঝামেলা সৃষ্টি না করার পরামর্শ দেয়। যেহেতু আফসার আলী ৬০-৭০ বছর ধরে জমির দখলে আছেন, সেহেতু চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শাহজাহান ও সামছুলকে ধৈর্য ধারণ করার কথা বলা হয়। তবে লালমিয়া এবং মনজুরুল পুলিশের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করে জমি তারা নিজেরাই চাষ করবেন বলে হুমকি দিয়ে চলে যান।
পরের দিন, বুধবার দুপুরে আফসার আলী জমিতে পানি নিতে গেলে মনজুরুল এবং লালমিয়ার নেতৃত্বে ২০-৩০ জন লোক তাকে মারতে শুরু করে। খবর পেয়ে আফসার আলীর মেয়ে আদুরী, ছেলে এরশাদ, ইকবাল, সাজু, মিনি বেগমসহ কয়েকজন তাকে উদ্ধারে গেলে তাদেরকেও বেধড়ক মারপিট করা হয়। এ সময় মনজুরুলসহ কয়েকজন দেশীয় ছোরা দিয়ে আফসার আলীকে এলোপাতাড়ি কোপায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
আহতদের মধ্যে আফসার আলী মন্ডলের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পাঁচ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় আফসার আলী মঙ্গলবার ভোররাতে মৃত্যুবরণ করেন।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) হাফিজ জানান, মারামারির ঘটনার দিনেই মামলা রেকর্ড করে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন এটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মনজুরুল আর লালমিয়া যদি পুলিশ এবং স্থানীয়দের কথা শুনতো তাহলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না। নিজেদের স্বার্থে জলঘোলা করতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আফসার আলীর মরদেহের পোস্টমর্টেম চলছিল।