মামলা দিয়ে কুমিল্লার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের অসহায় মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির সাবেক নেতা আরাফ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ তুলে শুক্রবার (১ আগস্ট) কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
এতে বক্তারা দাবি করেন, একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় আরাফ ভূঁইয়া ভুয়া মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছেন এবং মামলা প্রত্যাহারের শর্তে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করছেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তি জানান, ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট এক মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় কিছু সাধারণ মানুষকে, যারা আদতে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র বহন, ককটেল বিস্ফোরণ এবং শিক্ষার্থীদের আহত করার অভিযোগ আনা হয়, যদিও মামলার সময় ও ঘটনার বর্ণনায় অসংগতি রয়েছে। যেমন, এজাহারে ৪ আগস্ট শনিবার উল্লেখ করা হলেও, ওই তারিখ ছিল রোববার।
অভিযোগপত্রে ঘটনার স্থান হিসেবে টমছমব্রিজ ও সালাহউদ্দিন মোড়ের নাম থাকলেও, প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার সাক্ষীদের দাবি— সেদিন আন্দোলন হয়েছিল কোটবাড়ি বিশ্বরোড এবং পরে স্থানান্তরিত হয় আলেখারচর বিশ্বরোডে।
এ মামলার প্রথম সাক্ষী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইকবাল বলেন, ‘৪ তারিখ টমছমব্রিজ এলাকায় কোনো আন্দোলন হয়নি। আমি কোটবাড়িতে হামলার শিকার হয়েছিলাম। মামলা সম্পর্কে বিস্তারিত না জেনে আমাকে সাক্ষী বানানো হয়েছে। পরে জানার পর আমি বাদীকে জানিয়ে দিয়েছি— এই দায় আমি নিচ্ছি না।’
আরেক সাক্ষী ইমতেহাদ উল হক বলেন, ‘আমাকে ছাত্রলীগের নেতারা মারধর করেছিল রেসকোর্স এলাকায়। টমছমব্রিজের ঘটনায় আমি কিছু জানি না। আমি সাক্ষ্যেও স্বাক্ষর করিনি।’
আসামিপক্ষের কয়েকজন মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, আরাফ ভূঁইয়া মামলা প্রত্যাহার বা জামিন নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়ে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করেন। রিয়াজ খান নামের একজন বলেন, ‘আমি আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলাম। মামলার পর গ্রেপ্তার হলে আরাফ ২ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় আমাকে তিন মাসেরও বেশি কারাবাস করতে হয়।’
একই অভিযোগ করেন আসামি আল আমিনের স্ত্রী সীমা আক্তার ও স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া। তাদের অভিযোগ, ‘আরাফ ভূঁইয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলায় জড়িয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন।’
চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে আরাফ ভূঁইয়া বলেন, ‘মামলাটি ৪ আগস্টের ঘটনার ভিত্তিতে করা হয়েছে। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষীদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে। যারা মানববন্ধন করেছেন, তাদের আমি চিনি না। তারা যদি প্রমাণ দিতে পারেন, আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা মেনে নেব।’
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মইনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘কারা মানববন্ধন করেছে আমরা জানি না। কেউ যদি লিখিত অভিযোগ দেয়, আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’