কুরুচিপূর্ণ মেসেজ, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আপত্তিকর জিজ্ঞাসা, রাতে ছাত্রীর ইমোতে ভিডিও কলসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম ড. আজিজুল ইসলাম। তিনি বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
এ ঘটনায় বিভাগের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ডজনখানেক ছাত্রী।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষককে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে মঙ্গলবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত শিক্ষক আজিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন ব্যবহার করে আসছেন। এত দিন শিক্ষার্থীরা ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করেননি।
পরে বিভাগের ছাত্রীরা একত্র হয়ে গত ২২ জুন তার বিরুদ্ধে বিভাগের সভাপতির কাছে অভিযোগ দেন। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তে গত ২৮ জুন থেকে তাকে বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অভিযোগে এক ছাত্রী বলেন, “স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। আমি কল রিসিভ না করায় পরে অডিও কল দেন।
তখন তিনি বলেন, অনেক দিন তোমাদের দেখি না, তোমরা মোটা হয়েছো না চিকন হয়েছো, তা দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি। তারপর উনি বলেন, তোমার কি কথা বলার লোক আছে?’ আমি বলি না নেই। তখন তিনি বলেন, এখন বলছো কেউ নাই, কিছুদিন পর তো দেখব ক্যাম্পাসে কোনো ছেলের হাত ধরে ঘুরছো।”
অভিযোগে তিনি আরো বলেন, ‘স্যার ক্লাসে বিভিন্ন সময় আমাকে উদ্দেশ করে আজেবাজে ইঙ্গিত করে বাজে কথা বলেন। আমার উচ্চতা নিয়ে তিনি কুরুচিপূর্ণ জোকস করেন।
আমি বিবাহিত হওয়ায় বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত জীবন ও সম্পর্ক নিয়ে আমাকে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তিনি আমাকে সবার মাঝে ক্লাসে দাগ করিয়ে মেন্সট্রুয়েশন সাইকেল নিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলেন। যা আমার জন্য খুবই অপমানজনক। এভাবে বিভিন্ন সময় উনি ক্লাসে বাজে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন এবং হুমকি দেন যে তার কোর্সে ভালো রেজাল্ট করতে পারব না।’
এ ছাড়া আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া, রুমে ডেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আপত্তিকর জিজ্ঞাসা, ক্লাসে সবার সামনে আজেবাজে ইঙ্গিত করা, ছাত্রীদের ভিডিও কল দেওয়া, কল না ধরলে রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি, বিবাহিত ছাত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজের আন্ডারে প্রজেক্ট করতে পছন্দের ছাত্রীদের বাধ্য করা ও ছাত্রীদের বডি শেমিং করাসহ নানাভাবে হেনস্তা করার অভিযোগ করেন বিভাগটির বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আপাতত আপসেট আছি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা নিয়মানুযায়ী একাডেমিক কমিটির সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।’