তিন বন্ধু- আরমান খান মোস্তফা, সাজ্জাদ হোসেন নাফি ও প্রলয় হাওলাদার। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। সোমবার বিমান দুর্ঘটনার দিন ক্লাসের পর ক্যান্টিনের পাশে আড্ডায় মেতেছিল। তিন বন্ধুর খুনসুটিময় আড্ডার মাঝে হঠাৎ বিকট শব্দ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। তখনো জানতো না বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। আগুনের সঙ্গে শুরু হয় চিৎকার। তারা এগিয়ে যেতেই দেখে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ছুটছে। অধিকাংশরই শরীরের বিভিন্ন অংশ পোড়া। সোমবারের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা বর্ণনা করতে যেয়ে গলা জড়িয়ে আসছিল ওদের। ঘটনার বর্ণনা দেয়ার সময় মাথার উপর দিয়ে একটা বিমান উড়ে যায়। যা এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত চিত্র। তবুও শঙ্কিত হয়ে ওঠে ওরা। এই আতকে ওঠার চিত্র একাধিক শিক্ষার্থীদের মাঝেই লক্ষ্য করা যায়।
আরমান বলে, আমরা কী হয়েছে জানতে এগিয়ে যাই। দেখি একটা ছেলের হাতে আগুন জ্বলছে। সে কান্না করতে করতে আমাদের দিকে আসছে। আমরা দুটা ব্যাগ দিয়ে হাতটা জড়িয়ে ধরি। এরপর আগুন নিভে যায়। ওই শিশুকে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে আসি। তখন অনেক মানুষ চলে এসেছে। উদ্ধার করছে।
আরেক বন্ধু নাফি বলে, আমরাও বিচলিত হয়ে যাই কী করবো? দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। চারিদিকে কান্নার শব্দ। আমরা আহত চার থেকে পাঁচজনকে ভ্যানে তুলে দিয়েছি। সবার শরীরেই কোনো কোনো জায়গায় পোড়া ছিল। একটা মেয়ের ব্যাগে আগুন জ্বলছিল। ব্যাগটা কাপড় আর পিঠের সঙ্গে লেগে ছিল। যে খুলতে পারছিল না। জোর করে ব্যাগটা টান দেয়। এ সময় পিঠের কিছু চামড়াও উঠে যায়। একথা বলার সঙ্গেই গলা জড়িয়ে আসে নাফির। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না। পানি পান করার পর নাফি আবার বলে, মেয়েটা ব্যথায়, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। ওকেও ধরে ভ্যানে উঠিয়ে দেই। যখন ভ্যানে উঠে, তখন পিঠে ব্যাগের একটা অংশ লেগে ছিল।
নাফি আরও বলে, লোকে লোকারণ্য চারপাশ। ট্রমাটাইজড বাচ্চারা কী করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। যেহেতু অভিভাবক নেই তাই আমরা তাদের নিয়ে একত্র করে গার্ডের কাছে দিয়ে আসছিলাম। আমরা অন্তত ১৮ থেকে ২০ জনকে উদ্ধার করি।
উদ্ধার করতে করতে নিজের ছোট ভাইয়ের কথাই ভুলে গেছিল প্রলয়। সে বলে, একটা মেয়ে হাঁটতে পারছিল না। এক পায়ের নিচের অংশ ও পিঠ জ্বলে গেছে। মেয়েটা পড়ে যায়। আর মা মা বলে চিৎকার করছে। ওই সময় চারদিকে ধোঁয়া ও ধুলা ছেয়ে গেছে। মেয়েটা একটা গাছের সঙ্গে আঘাত পেয়েছিল। সেখানে থাকলে হয়তো পদদলিত হতো। আমরা তিনজন মিলে মেয়েটাকে ধরে একটু খোলা জায়গায় নিয়ে আসি। কিছু লোক ভ্যানে করে আহতদের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই মেয়েকে আমরা ভ্যানে তুলে দেই।
প্রলয় বলে, আমি যখন এসব করছি তখন আমার ছোট ভাইয়ের কথাই মনে ছিল না। আমার ছোট ভাই এই স্কুলেই প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাইয়ের ক্লাস একটু দূরে ছিল। আমি সেখান থেকে দৌড়ে যাই। যেয়ে আর ভাইকে পাই না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখি একজন ম্যাডাম অনেকগুলো শিক্ষার্থীকে একত্র করে আগলে রেখেছে।