শিরোনাম
অপুকে গ্রেপ্তারের আগে অপহরণ করে আসিফ-নাহিদের নাম শুনতে চাওয়া হয়: অপুর স্ত্রী রংপুরে শত্রুতার জেরে পুকুরে বিষ প্রয়োগ, নিধন হলো সব মাছ, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, তলিয়ে যাচ্ছে রংপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা মহিপুরে তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধে ধস, বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক ইসলামী দলগুলোর ঐক্য সহ্য করতে পারছে না চাঁদাবাজরা মেয়াদোত্তীর্ণ কেক খেয়ে শিশু সহ ৫ সাংবাদিক অসুস্থ পাথর উদ্ধারে রাতভর যৌথবাহিনীর অভিযান; ১২ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে: লালমনিরহাটে পানিবন্দি ১০ হাজার পরিবার সিলেটে চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারে চলছে যৌথ বাহিনীর অভিযান সেনা প্রধানের কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই: আইএসপিআর
বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০৭ অপরাহ্ন

মহিপুরে তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধে ধস, বাড়ছে ভাঙন আতঙ্ক

স্থানীয় রিপোর্ট / ৮ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। এতে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে স্রোতের ক্ষিপ্ত শব্দে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট–রংপুর সড়কসহ পার্শ্ববর্তী হাজারের বেশি পরিবারের বসতবাড়ি।

বুধবার (১৩ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতের পানি হু হু করে বাড়ছে তিস্তার বুকে। এতে তিস্তা সেতুর পশ্চিম পাশের প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ সেতু রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশে আঘাত হানছে তীব্র স্রোতের ধাক্কা। বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। বর্তমানে বাকি ব্লকগুলোও ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে।

দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। মহিপুর এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই বারের বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার নদীতে পানি আসা মাত্রই বাঁধের ৬০ মিটার জায়গা ধসে গিয়ে বিশাল গর্ত হয়েছে। এতে তিন গ্রামের প্রায় এক হাজারের বেশি পরিবার ও সেতুটি ক্ষতির মুখে পড়েছে। আমরা এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগ দেখিনি। সবকিছু বিলীন হওয়ার পর তারা পরিদর্শনে আসে।

আনসার আলী আরেক বাসিন্দা বলেন, নদীর পানি বাড়া-কমাতে ভাঙন শুরু হয়েছে। সেতু রক্ষা বাঁধ ভাঙছে। এলাকার জমিগুলোও তো ভেঙে গেছে। কত দিন ধরে শুনে আসছি যেন তিস্তা প্রজেক্ট হবে, কিন্তু হয় তো আর না।

২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তার ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুটি রংপুর–লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু বর্তমান ভাঙন যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে সেতু ও সংলগ্ন সড়ক মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, এর আগে দুইবার বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও তীব্র স্রোতে বাঁধে আঘাত লাগছে, উজানে আরও বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তখন পানি সরাসরি লালমনিরহাট–রংপুর সড়কে আঘাত করবে, যা ভেঙে গেলে ৩০ লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। পাশাপাশি তিনটি গ্রামের অন্তত দেড় হাজার পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এদিকে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী গ্রামের কুমোবালা বলেন, সকাল থেকে বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এর আগে পানি উঠে দুই দিন কষ্টে থাকলেও কোনো সহায়তা পাইনি।

গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের বিনবিনা, শখের বাজার, খলাইর চর, মটুকপুর, আবুলিয়া, চিলাখাল এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় এসব এলাকার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকার জামাল মিয়া বলেন, রাতে নদীর পানি ছিল না। সকাল থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। দুপুরের মধ্যেই ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গরু বাছুর নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি। সব জায়গা ডুবে গেছে কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই।

গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ