নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার উত্তর সুন্দরখাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফরিন সুলতানা লিয়ার বিরুদ্ধে ভূয়া চিকিৎসা সনদ ব্যবহার করে বিদ্যালয়ে মেডিকেল ছুটি নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি প্রকাশ পাওয়ার পর শিক্ষা মহল, প্রশাসন ও স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে চিকিৎসক বলছেন, সনদটিতে তার সাক্ষর জাল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
তথ্য অনুযায়ী, ১৭ মে ২০২৫ ইং তারিখে আফরিন সুলতানা লিয়া বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি মেডিকেল সনদ জমা দেন। সনদে উল্লেখ থাকে, তিনি ডিমলা উপজেলার মেডিকেল মোড়ে অবস্থিত “লাইট ডায়াগনস্টিক এন্ড হেলথ পয়েন্ট” থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং চিকিৎসক ছিলেন ডা. জাকারিয়া জালাল।
কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে দাবি করেছেন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বাদশা সেকেন্দার ভুট্টু। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ডা. জাকারিয়া জালাল প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে আমাদের সেন্টারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই তার নামে চলতি বছরের মে মাসে কোনো বৈধ সনদ ইস্যুর প্রশ্নই আসে না। সনদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও প্রতারণামূলক।”
“ডি আর বি নিউজের” অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য—লিয়ার প্রদত্ত চিকিৎসা সনদে একই চিকিৎসকের নামে দুটি ভিন্ন ধরনের স্বাক্ষর রয়েছে। স্বাক্ষরের অসঙ্গতি এবং চিকিৎসকের অনুপস্থিতির বিষয়টি মিলে সনদের বৈধতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসা সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাকারিয়া জালাল বলেন, “আফরিন সুলতানা লিয়া কয়েক বছর আগে আমার কাছে সাধারণ সর্দি-জ্বরের জন্য চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তখন তিনি চিকিৎসা সনদ চেয়েছিলেন, কিন্তু আমি তাকে জানিয়েছিলাম, এই ধরনের রোগের জন্য মেডিকেল সনদ দেওয়া হয় না। এখন যে সনদটি তার বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি আমার প্যাডে হলেও স্বাক্ষর পুরোপুরি জাল। আমি চলতি বছরের মার্চ মাসে নীলফামারী ছেড়েছি, অথচ সনদে তারিখ দেওয়া হয়েছে মে মাসের ১৭ তারিখ—যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার স্বাক্ষর জাল করে সনদ প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
অভিযুক্ত শিক্ষিকা আফরিন সুলতানা লিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অনিয়ম ও আচরণগত অভিযোগ উঠেছিল, যদিও সেগুলো প্রমাণিত হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছি বলেন, “যদি প্রমাণ হয় যে আফরিন সুলতানা লিয়া ভূয়া চিকিৎসা সনদ ব্যবহার করে ছুটি নিয়েছেন, তবে এটি প্রতারণা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের গুরুতর অপরাধ। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছে, সরকারি চাকরিতে থেকে এমন জালিয়াতি ও প্রতারণা শুধু প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকেই ক্ষুণ্ণ করে না, বরং শিক্ষার্থীদের কাছেও নেতিবাচক বার্তা দেয়। তারা মনে করছেন, একজন শিক্ষক যদি নিজেই প্রতারণার পথ বেছে নেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সততা ও নৈতিকতা শিখবে? তাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।