শিরোনাম
ইসরায়েলের ২৮টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিতের দাবি ইরানের ইসরায়েলি ভূখণ্ডে জোড়ালো হামলা; আবারও ৮ দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে ইরান লালমনিরহাটের পাটগ্রামে জমি নিয়ে সংঘর্ষে নিহত-১ ‘জামায়াত আগে ছিল হেলমেট বাহিনী, এখন তারাই টুপি লাগিয়ে হামলা করে’ ইরানের আকাশ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের বাংলাদেশ দূতাবাসের, প্রাণে বেঁচেছেন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়ে দেশে দুজনের মৃত্যু; শনাক্ত ১৮ নিজের নামে স্মার্টফোন আনছেন ট্রাম্প রংপুরে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু, প্রস্তুত আইসোলেশন ওয়ার্ড ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ২৪৪ জন আক্রান্ত
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন

ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা ফিরছে নতুন রূপে

ডেস্ক নিউজ : / ২৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩ জুন, ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী ও পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান—যাদের ইতিহাস জুড়েই আছে উত্তেজনা ও সংঘাতের ছায়া, এবার সেই বৈরিতা নতুন মাত্রা পেয়েছে পানি সম্পদ নিয়ে। বহু পুরোনো ইন্দাস পানি চুক্তিকে কেন্দ্র করে এবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণায় জানান, ১৯৬০ সালের ইন্দাস পানি চুক্তি “কার্যত স্থগিত” রাখা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন কাশ্মীর অঞ্চলে একটি ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয় এবং ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করে সীমান্তপারের জঙ্গিদের সহায়তায়।

পানি এখন কূটনৈতিক অস্ত্র?

ইন্দাস নদীর পানি সরাসরি প্রায় ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের জীবনধারার সঙ্গে জড়িত। এই চুক্তির অধীনে, পাকিস্তান পায় পশ্চিমের তিনটি নদীর (ইন্দাস, ঝেলাম, চেনাব) পূর্ণ অধিকার, আর ভারত ব্যবহার করে পূর্বের তিনটি (রবি, বিয়াস, সুতলজ)। তবে পশ্চিমের নদীগুলোতেও সীমিত সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প চালানোর অধিকার ভারতের আছে, যা নিয়ে বহু বছর ধরে পাকিস্তানের আপত্তি রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের এই পদক্ষেপ কেবল নিরাপত্তাগত চাপ প্রয়োগের কৌশল নয়, বরং ইঙ্গিত দেয় একটি দীর্ঘদিনের অসন্তোষের প্রকাশ। নয়াদিল্লির মতে, পাকিস্তানের জন্য এই চুক্তি অতিরিক্ত সুবিধাজনক এবং ভারতের জন্য রয়েছে পানি ব্যবহারে কঠোর সীমাবদ্ধতা।

পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তান সরকারের বক্তব্যে এই সিদ্ধান্তকে ‘অঘোষিত যুদ্ধের এক রূপ’ বলা হয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পানি তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বন্যা পূর্বাভাস, কৃষিকাজ ও পানি ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটবে।

 

পাকিস্তানের সাবেক কমিশনার শিরাজ মেমন জানান, “ভারত আগে থেকেই সীমিত তথ্য দিত। এখন সেই ন্যূনতম প্রবাহও বন্ধ হলে পাকিস্তানের জন্য এটি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে।” আরেক সাবেক কর্মকর্তা ফজলুল্লাহ কুরেশি স্মরণ করিয়ে দেন, তথ্য না থাকার কারণে ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা রোধ করা যায়নি, যা প্রাণ কেড়ে নেয় প্রায় ১,৭০০ মানুষের।

চুক্তির শর্ত বনাম বাস্তবতা

বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে স্বাক্ষরিত ১৯৬০ সালের এই চুক্তি ঐতিহাসিকভাবে শান্তি ও সহযোগিতার এক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে এই চুক্তির আধুনিকায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভারতের বিশেষজ্ঞরা।

আইআইটি গান্ধীনগরের পরিবেশবিদ অধ্যাপক ভিমল মিশ্র বলেন, “বর্তমান বাস্তবতায় বিজ্ঞানভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনা ছাড়া টেকসই সমাধান সম্ভব নয়। এই চুক্তির ভাষা ও কাঠামো এখন সময়োপযোগী নয়।”

উত্তেজনার ভবিষ্যৎ পরিণতি

যদিও এখনো সামরিক সংঘাতের সৃম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে, তবে পানি ইস্যুতে ভারতের কৌশলগত অবস্থান আঞ্চলিক ভারসাম্যে নতুন এক চাপ তৈরি করেছে। পানির মতো মৌলিক সম্পদকে কূটনৈতিক টানাপড়েনের হাতিয়ার বানানো হলে ভবিষ্যতে তা শুধু রাজনৈতিক নয়, মানবিক বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশকেই দ্রুত আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন—না হলে এককালের সভ্যতা গঠনের নদী আজ জাতিগত সংঘাতের ঢেউ তুলতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ