রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে(বেরোবি)পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড.রশিদুল ইসলামের যৌন হয়রানির দ্রুত বিচার না হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন তার বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
আজ (০৩ জুলাই) বৃহস্পতিবার বিকাল ২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া চত্বরে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানি দ্রুত বিচার চেয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন,রোকেয়ার ক্যাম্পাসে নারী লোভীর ঠাই নাই,রেপিস্ট থাকে ক্যাম্পাসে আমরা থাকি আতঙ্কে,রেপিস্টের বিচার চাই,বহিষ্কার করতে হবে আরও বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন ও প্লেকার্ড লেখা নিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
এ সময়ে শিক্ষার্থীরা বলেন,নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের নামে এই বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে কোনো নারী লোভী থাকতে পারে না।এই ক্যাম্পাস ও বিভাগ আমাদের জন্য আতঙ্ক আমরা বিভাগে নিরাপদে চলাচল ও ক্লাসে আসতে ভয়ে থাকি।এমন শিক্ষকের ক্লাস করতে চাই না,তাকে যেনো দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয় এবং তার বহিষ্কার চাই।
তারা আরও বলেন,৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি দৃশ্যমান শাস্তি না হয়, তাহলে আমরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করব এবং আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
এ সময়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন,আমরা প্রশাসনের বিচার কার্য ব্যাহত হয়—এমন কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াইনি। কিন্তু নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া শওকত হোসেনের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানির বিচারে এত দীর্ঘসূত্রিতা সত্যিই দুঃখজনক।
রশিদুল ইসলাম যেখানেই দায়িত্বে ছিলেন, সেখানেই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি নাম্বার টেম্পারিংয়ের অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে, কিন্তু আজও কোনো দৃশ্যমান শাস্তি আমরা দেখতে পাইনি।
আমাদের প্রশ্ন—তার শাস্তি গোপনে কেন হবে? যারা অভিযোগ করেছেন, যারা সম্মান হারিয়েছেন, যারা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন, তাদের সামনে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি দৃশ্যমান শাস্তি না হয়, তাহলে আমরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করব এবং আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব।
আমরা এই ক্যাম্পাসে একজন রেপিস্টকে দেখতে চাই না। যেখানে আমাদের বোনেরা নিরাপদ নয়, সেখানে আমরা কীভাবে নিশ্চিন্তে পড়াশোনা করব?
শায়মাতুজ্জাহান মুন পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩ তম ব্যাচ শিক্ষার্থী বলেন,আমরা জানতে পেরেছি অভিযুক্ত শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেটি প্রকাশ করা হবে না—শুধু একটি চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে। অথচ তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি আমাদের ডিপার্টমেন্ট এবং পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তার শাস্তির বিষয়ে কেন এত গড়িমসি হচ্ছে? কেন তা প্রকাশ করা হচ্ছে না? এজন্যই আমাদের আজকের মানববন্ধন। এমন একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা উচিত নয়। তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার সাহস না পায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের অধ্যাপক ড.ইলিয়াস প্রামাণিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,শাস্তির বিষয়টি গোপন রাখা হয়নি, বরং নিয়ম অনুসারেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১১৩তম সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই ধরনের বিষয়ে প্রথমেই অভিযুক্তকে শাস্তির সিদ্ধান্ত জানানো হয় এবং পরবর্তীতে তা আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সামনে প্রকাশ করা হয়—এটাই প্রক্রিয়ার অংশ।
আমি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করতে চাই, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বিষয়টি আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করব এবং তোমরা তা গণমাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যমে জানতে পারবে।