বিএনপি ও এনসিপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছে বলে মন্তব্য করেছেন নিউএজের সম্পাদক নূরুল কবীর। সম্প্রতি একটি বেসরিকারি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নূরুল কবীর বলেন, এনসিপির তরুণ নেতৃত্বকে মানুষ প্রচণ্ড ভালোবেসেছিল। কারণ গত বছরের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনগুলো ফলপ্রসূ হয়নি।
বাস্তব সত্য হলো- এই শিক্ষার্থীরাই সেই স্বৈরাচার পতনে সর্বশেষ ঝাকিটা দিয়েছে। সঙ্গত কারণে সমস্ত মানুষ যাদের নাবিশ্বাস উঠেছিল আওয়ামী দুঃশাসনের অধীনে তারা এই শিক্ষার্থীদের হিরোর মর্যাদা দিয়েছে, সন্তানের মতো দেখেছে, ভালোবেসেছে।
তিনি বলেন, এই তরুণরা যখন রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বলেছেন মানুষের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভঙ্গি লক্ষ্য করেছি। কিন্তু দল গঠনের পর তাদের ওপর আস্থায় ফাটল ধরেছে।
তার জন্য যতটানা জনগণ দায়ী তার চাইতে তারা নিজেরা দায়ী। প্রথমে তারা কয়েক ভাগ হয়ে গেলেন। তারপরে শেষ পর্যন্ত দুইটা পার্টি হয়েছে। একটা পরিষ্কারভাবেই দক্ষিণপন্থী।
আরেকটা তার ম্যানিফেস্টো এখনো দেয় নাই।
তিনি আরো বলেন, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চায়। এজন্য বহিরঙ্গের দিক থেকে যে টাকা পয়সা দরকার, অনেকগুলো গাড়ি দরকার, বড় অফিস দরকার, অর্থাৎ বিএনপির সঙ্গে তারা কম্পিট করার জন্য নানান জায়গা থেকে চাঁদা গ্রহণ করা হলো। সংগঠন দাঁড়িয়ে যাবার আগেই বহিরঙ্গ সম্পর্কে যে ধারণা তরুণরা দিলেন এতে মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়েছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এনসিপি ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চান না।
কারণ এনসিপি নতুন পার্টি, এখনো ম্যানিফেস্টো তৈরি হয়নি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের একটা স্বপ্ন হয় তারা দেখেছেন অথবা কোনো একটা স্বার্থ তাকে তাদেরকে এ স্বপ্ন দেখিয়েছে। তাদের স্বপ্ন দেখার মধ্যে কি ভুল আছে? না ভুল নাই।
নূরুল কবীর বলেন, তবে ইতিহাসের নিয়ম অনুযায়ী একটা রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবার জন্য যথেষ্ট সময় লাগে। এই তিন চার মাস বা আরো বেশি ছয় মাস পেলে কেন্দ্র থেকে দেশের পরিধি পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে একটা প্যারালাল পার্টি দাঁড়িয়ে যে যাবে না- এটা হয় তারা নিজেরা বোঝেননি, অথবা তাদেরকে যারা বিএনপির এগেইনস্টে দাঁড় করাতে চান তারাও বুঝেও তাদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের রাজনীতিটাই এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার হয়নি, তারা কি চান বা কি করতে চান।
তিনি বলেন, এরকম একটা পর্যায়ে তারা বিএনপিকে আক্রমণ করে কথাবার্তা বলেছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব বাজে ভাষায় আক্রমণ করে কথা বলেছেন। অন্যদিকে বিএনপির কয়েকজন নেতা এই তরুণদের অসম্ভব বাজে ভাষায়, অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করেছেন। এই তরুণরা ভুলে গেছে যে, তিন মাসে-ছয় মাসে বা এক বছরে বড় পার্টি হয়ে যায় না। আর পুরনোরা ভুলে গেছেন যে, তারা ১৫ বছর ধরে নানা ধরনের নিপীড়ন নির্যাতন ভোগ করলেও এই ছাত্র-ছাত্রীরা যেই সাহস দেখিয়ে নেতৃত্ব দিয়ে তাদের ও নেতা নেত্রীদের মুক্ত করেছেন; তাদের প্রতি যে সমীহতা উচিত ছিল বিএনপি তা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈক্য আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, এই যে দুই দিক থেকে এই টানাপোড়েন, এর মূলে দুইদিক থেকে ভুল ভ্রান্তি আছে, পরস্পর প্রতি অন্যায় আচরণ আছে। বিএনপি তাড়াহুড়া করে ক্ষমতায় যেতে চায়, এনসিপিও তাড়াহুড়া করতে চায়।