শিরোনাম
ডিআইজির কাছে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের স্মারকলিপি গোবিন্দগঞ্জে সরকারি ১শ’১৯ বস্তা চালসহ বিএনপি নেতা সাবু গ্রেপ্তার রংপুরে শিশুদের ঝগড়া ঘিরে উত্তেজনা, বসতবাড়ি ভাঙচুর ও দুজনকে কুপিয়ে জখম চাঁদা না পেয়ে কাজে বাঁধা : চেয়ারম্যান-বিএনপি নেতার সঙ্গেও উচ্চবাচ্য বিএনপির ওয়ার্ড নেতার  খালেদা জিয়া ভালো আছেন, জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্বও দেবেন: ডা. জাহিদ হিলিতে বিচার দাবীতে এলাকাবাসী মানববন্ধন,বিক্ষোভ  অনুষ্ঠিত  খালেদা জিয়ার ভাগনে তুহিনকে মুক্তি না দিলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন সাইবার আইন কার্যকর: আসিফ নজরুল খালেদা জিয়া দেশে ফেরায় ‘আনন্দিত’ জিএম কাদের, বললেন প্রত্যাশার কথা ঈদুল আজহায় ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন

বিএনপির প্রত্যাশা ঐক্যের ভিত্তিতে ‘বৃহত্তর সমঝোতা’

ডেস্ক নিউজ / ২২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘বৃহত্তর সমঝোতা’ হবে বলে প্রত্যাশা বিএনপির। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির তৃতীয় দিনের আলোচনার শুরুতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বেলা ১১টার পর এই আলোচনা শুরু হয়ে বিকেলে সমাপ্ত হয়। বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতিতেও আলোচনার অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সালাহউদ্দিন। এর আগে গত বৃহস্পতি ও রোববার দিনভর আলোচনার পর বৈঠক মুলতবি করা হয়েছিল।

এদিন আলোচনার শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে সুপারিশগুলো দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত দিয়েছে। বিএনপিসহ ১৫টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। বাকি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হবে। বিএনপির সঙ্গে আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) আলোচনার সমাপ্তি টানা যাবে বলে আশা করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমেদও একই আশার কথা জানান। তিনি বলেন, বিএনপি আশা করছে, আজকে (গতকাল মঙ্গলবার) এ পর্যায়ের আলোচনা শেষ করতে পারবে। বিএনপি খুব দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র, প্রজাতন্ত্র ও সংবিধানের বিষয় নিয়ে তাড়াহুড়া করার সুযোগ নেই। ঐকমত্যের ভিত্তিতে এই কমিশনে যেসব সিদ্ধান্ত হবে, তা জাতীয় জীবনে মহান ভূমিকা রাখবে। তাই সময় বেশি নিলেও বিএনপি বিস্তারিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি নির্দিষ্ট না করে ‘জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিদের মধ্যে ন্যূনতম দুই থেকে তিনজন’ রাখার প্রস্তাব করেছে বিএনপি। বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিএনপি বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জের বিষয়টি এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—এগুলোসহ আমরা বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং সেটা আমাদের বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার আছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট সব উদ্যোগ যেন আইনানুগ এবং সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় যায়, বিচার বিভাগকে সেটার আহ্বান জানাব। রাষ্ট্রপতির অভিশংসন প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের বিষয়ে বিএনপি একমত পোষণ করেছে। ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়েও একমত হয়েছে দলটি।

বিএনপি বিভাগ পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে জানিয়ে দলটির এই নীতিনির্ধারক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে কথা হয়েছে। উনাদের প্রস্তাব হলো, স্থায়ী বেঞ্চ যেন বিভাগগুলোতে করা হয়। অষ্টম সংশোধনী ছিল সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময়ে। সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণের জন্য যে বিধান আনা হয়েছিল সংবিধানে, সেটা চ্যালেঞ্জ হয়ে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে যায় না এবং সাংঘর্ষিক। যেহেতু এটার বিষয়ে বাতিল করে, এটা জাজমেন্ট আছে—সেজন্য আমরা বলেছি, সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য আর্টিক্যাল-১০০ এ প্রভিশন আছে যে, এটার ওপরে যেন আমরা কম্পালসন একটা আনতে পারি, জুডিশিয়ারিকে যেন আমরা এখানে কনস্টিটিউশনে একটা প্রভিশন করতে পারি অথবা সাব-সেকশন করতে পারি ওখানে, যাতে করে প্রতি বছর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য এখানে একটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা যায়। তাতে একই ফাংশনটা করা যাবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপুয়েন্টমেন্ট অথবা ‘জুডিশিয়াল অ্যাপুয়েন্টমেন্ট কমিশন’ নামে উনারা একটা কমিশনের প্রস্তাব করেছেন। আমরা এটার বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত। বলেছি যে, এটা সংসদে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগের যোগ্যতায় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাব করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপককেও যাতে বিচারক নিয়োগ করা যায়। আমরা বলেছি, এ বিষয়টি প্রস্তাবিত আইনে আছে অথবা এখন যে আইনটা করার চেষ্টা করছি বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, যেটা এখন হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বিভিন্ন কারণে—সেইটা নিষ্পত্তি হলে তখন আইন করা যাবে। তবে আমরা এ বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত।

সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধিদলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব আবু মো. মনিরুজ্জামান খান ছিলেন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশন সদস্যদের মধ্যে বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।

কমিশনের ‘সব কমিশনকে সাংবিধানিক কমিশন করার প্রস্তাবের’ বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, উনারা বেশ কয়েকটা প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক কমিশন হিসেবে নিয়ে আসার জন্য প্রস্তাব করেছেন। মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং আরও একটা কমিশন সৃষ্টি করার জন্য বলেছেন—স্থানীয় সরকার কমিশন, যেটা এখন নেই। আমরা বলেছি, প্রতিটি কমিশনকে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তাতে জটিলতা বাড়বে। বিদ্যমান আইনে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে পরিচালিত হচ্ছে সেভাবে থাকা উচিত।

মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে আর্টিক্যাল-৮, ৪৮, ৫৬ এবং ১৪২, যেখানে সংবিধান সংশোধনীর বিভিন্ন উপায় বলা আছে—এগুলো পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ সরকার গণভোট বাতিল করে দিয়েছিল। পরে কোর্টে ভার্ডিক্টের (রায়) মাধ্যমে ১৫তম সংশোধনী যেটা চ্যালেঞ্জ হয়েছে, গণভোটকে রি-ইস্টিড করা হয়েছে, সেই বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে গণভোট হওয়া উচিত না। তবে আমরা প্রভিশন রেখেছি, প্রস্তাব রেখেছি যে, ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট যদি আরও কোনো কোনো আর্টিক্যালের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান রাখতে চায়, সেটা ভবিষ্যৎ পার্লামেন্টের বিষয়।

বিএনপি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার পক্ষে জানিয়ে দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাহী বিভাগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা, বিষয়টা আসলে টেকনিক্যাল। আসলে এটা হচ্ছে ‘কর্তৃত্বে মন্ত্রিসভা’ কর্তৃক পরিচালিত হবে সরকার। এখানে আমরা একমত নই। আর রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে আমরা আর্টিক্যাল-৪৮ এর সাব-সেকশন-৩ এর পরে আরেকটা নতুন আর্টিক্যাল প্রস্তাব করব; এখানে রাষ্ট্রপতির হাতে কী কী ক্ষমতা অর্পণ করা যায় এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করে রাষ্ট্রপতি কী কী ফাংশন করতে পারেন, সেটা ডিটেলড (বিস্তারিত) করা থাকবে, অনেক বিষয় থাকবে। সেটা উনারা (কমিশন) মোটামুটি গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়েছে। এখানে যাতে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনয়ন করা যায়, একটা ব্যালেঞ্জড গভর্নমেন্ট ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করা যায়, সেই বিষয়ে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ, সেই বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

সালাহউদ্দিন বলেন, কমিশনের প্রস্তাবে আছে, প্রধানমন্ত্রী যেন তিনটি পদে না থাকেন। প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা। এখানে সংসদে যে মেজরিটি পার্টির একটা সংসদীয় দল হয়, তখন সেই দলটি ঠিক করে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? নেসেসারেলি যে, পার্টির চিফ হবেন এমন তো কথা নেই, এ রকম উদাহরণ অনেক আছে। কিন্তু হওয়ার প্রভিশনটাতে অপশন রাখা উচিত। সংসদের একটা ট্রেডিশন যে, প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা হন। কোনো কোনো দেশে সংসদ নেতাকে আলাদাও করেছে, এ রকম নজির আছে। কিন্তু এখানে সংসদ নেতার কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই, সংসদ নেতা রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো মন্ত্রণালয় লিড করেন, তা নয়। এখানে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী অনেকটা অবিচ্ছেদ্য অংশের মতো।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি), সংসদের উভয় কক্ষের মেয়াদ, সংসদ সদস্যের বয়স ২১ বছর করা, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিএনপির নেতারা।

সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, পার্লামেন্ট হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন থাকবে, এর মধ্যে নারীদের জন্য ১০০ আসন রাখা এবং উচ্চকক্ষে ১০০ আসনের সুপারিশের বিষয়ে বিএনপি একমত।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ১৪ জন, উপদেষ্টাবলির কার্যাবলি, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে একজনকে নির্বাচিত করা, উচ্চকক্ষ-সিনেট ও নিম্নকক্ষ-জাতীয় সংসদ এই দুই কক্ষের কার্যাবলি, দুই কক্ষের ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নেওয়া, লোকাল গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্ধ না করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন (আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে হবে), জেলা পর্যায়ে অ্যাটর্নি সার্ভিস পরীক্ষামূলকভাবে (১০%) শুরু করা প্রভৃতি বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিএনপি। এ তথ্য জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কমিশনের সুপারিশের অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত হয়েছি।

স্থানীয় সরকারে কোনো সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে এমপিরা না থাকার বিষয়ে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত হলেও তা সংসদে আলোচনার একটু দাবি রাখে বলে জানান দলটির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ