মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন

বাবার পেশা বেছে নিতে হলো ‘মব ভিকটিম’ রূপলালের ছেলেকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর / ২৪০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫

বাবার পেশাকেই নিজের পেশা হিসেবে নিতে হলো। বাড়িতে আমার দাদি, মা ও দুই বোন রয়েছে। তাদেরকে দেখাশোনার ও ভরণপোষণের দায়িত্ব এখন আমার ওপর। বাবা বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তো এত তাড়াতাড়ি এই কাজে আসতে হতো না। বাবাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মেরে ফেলায় আমরা এতিম হয়ে গেছি।’ ঘটনার ২০ দিন পর শুক্রবার বাবার দোকানে বসে এভাবে বর্ণনা দেয় রংপুরের তারাগঞ্জে মব সৃষ্টি করে গণপিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের ছেলে জয় দাস (১৪)।

তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে জয়। শুক্রবার নতুন চৌপথী বাসস্ট্যান্ড থেকে অগ্রণী ব্যাংক মোড়ের মধ্যবর্তী স্থান তারাগঞ্জ জুতাপট্টির সামনের রাস্তার পাশে জলচৌকিতে বসে জুতা সেলাই করছিল সে। এসময় স্থানীয় অনেকে তাকে সমবেদনা জানান। জয় বলে, ‘ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করব; কিন্তু অভাবের সংসারে তা আর হলো না!’ জয় আরও বলে, ‘বিনা দোষে যারা আমাদের এতিম করল আমি তাদের বিচার চাই।’

পার্শ্ববর্তী দোকানদার সেতু মিয়া বলেন, ‘রূপলাল দাস নিরীহ মানুষ ছিলেন। দীর্ঘদিন বাজারে মুচির কাজ করেছেন, কিন্তু কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়াননি। কতিপয় দুর্বৃত্ত নিরীহ এই মানুষটাকে পিটিয়ে হত্যা করে তার পরিবারকে পথে বসাল। স্কুল যাওয়া বাদ দিয়ে জয় এখন জুতা সেলাই করছে। দুঃখ লাগছে ওকে দেখে।’

তারাগঞ্জ বাজারে জুতা সেলাই করে বৃদ্ধা মা, স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতেন রূপলাল দাস। কিছু টাকা জমিয়ে বড় মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। দিন-তারিখ ঠিক করার জন্য মিঠাপুকুরের খামার মকিমপুর গ্রাম থেকে ডেকে পাঠান ভাতিজি জামাই প্রদীপ লালকে।

উল্লেখ্য যে,  ভ্যান চালিয়ে প্রতিবন্ধী প্রদীপ লাল গত ৯ আগস্ট তারাগঞ্জের রুপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। কিন্তু গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রূপলালকে ফোন করেন। সেখানে রূপলাল গিয়ে দুজনে ভ্যানে চড়ে বাড়ির দিকে আসছিলেন।

রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ‘ভ্যানচোর’ বলে তাদের থামায় স্থানীয় কয়েকজন। এর পর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে শুরু হয় মারধর। অচেতন হলে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাদের ফেলে রাখা হয়। রাত ১১টার দিকে উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তাদের। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত ঘোষণা করে। প্রদীপকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করা হলে ভোরের দিকে তিনিও মারা যান।

এ ঘটনায় গত ১০ আগস্ট রুপলালের স্ত্রী ভারতী রানী বাদী হয়ে থানায় ৭০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক সমকালকে জানান, ভিডিও বিশ্লেষণ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে এ পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ