বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০১:১৩ পূর্বাহ্ন

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা, যুবদলের ৩ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

ডেস্ক নিউজ / ২৪ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে হামলার ঘটনায় যুবদলের ৩ নেতার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে থানায় মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদকে প্রধান আসামি করে তিনজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়।

নাম উল্লেখ করা অন্য দুই আসামিরা হলেন-উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ওরফে কাইয়ুম ও কামাল মিয়া।

উপজেলা প্রশাসন, মামলার আজহার ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদসংলগ্ন মুক্তমঞ্চে প্রশাসন আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশন চলাকালীন ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’ এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। এ সময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদ, যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ও কামাল মিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। পরে তাঁরা ইউএনওকে এখনি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় ইউএন কারণ জানতে চাইলে মঞ্চের ব্যানারে কেন স্থান হিসেবে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা হয়েছে? এ কথা বলে মোতাসছিরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘এ সময় ইউএনওসহ কর্মকর্তারা তাদের বাধা দিতে চাইলে ওই নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে এক নেতা উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দসহ ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন ব্যানারে তো কোন ‘বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ আবারো বলেন না ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেইসবুকেও ব্যানারের ছবি পোষ্ট আছে। আমার ফোনেও এই ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনি বন্ধ করতে হবে। বিশঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায় ফেইসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ১৪৩০ সালের।

ইউএনও রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম (মোতাসছির হোসেন), কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকেসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার মামলা হয়েছে।

আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, মঞ্চে হামলা, ভাঙচুর, অনুষ্ঠান পণ্ড করাসহ কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিবসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ফরিদ খান বলেন, ওইদিন আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেয়। ওই ব্যানারে বঙ্গবন্ধু চত্তর লেখা ছিল। ফেইসবুকেও একজনের শেয়ার দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় আমাদের দলের কাইয়ুম, কামাল হোসেনসহ কয়েকজন ব্যানার নামিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন যে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এর জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি। মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আটপাড়া উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ