পহেলা বৈশাখের সকালে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ এই মূল সুর ধারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানাতে এই বর্ণিল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ, যাদের উল্লাসে মুখরিত চারপাশ।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে এই আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু হয়।
শোভাযাত্রায় অতিথি অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানসহ দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
শোভাযাত্রার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে জুলাই আগস্ট আন্দোলনে শহীদ মীর মুগ্ধর ‘পানি লাগবে পানি’ পানির বোতল, ইলিশের মাছের কাঠামো ও হাসিনার ব্যাঙ্গাত্মক প্রতিকৃতি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ম্রো, মারমা, লুসাই, বম, খেয়াং, চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গা, সাঁওতাল, ওঁরাও, মনিপুরীসহ পাহাড় ও সমতলের ২৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবারের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন।
জানতে চাইলে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম শেখ ঢাকা মেইলকে বলেন, পহেলা বৈশাখের আয়োজনকে আনন্দময় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে সব ধরনের আয়োজন শেষ করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যরাও সতর্ক থাকবেন।
জানা গেছে, এবারের শোভাযাত্রায় ১০টি সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, ৮টি তালপাতার সেপাই, পলো ১০টি, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছের চাই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস ১০০ ফুট রয়েছে। চারুকলার সম্মুখভাগের দেয়ালে আঁকা হয়েছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ির মোটিফ।
আয়োজকরা জানান, শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে যাত্রা করে শাহবাগ মোড় ঘুরে টিএসসি, শহীদ মিনার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র এবং দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সম্মুখের রাস্তা দিয়ে ফের চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অংশগ্রহণকারীদের শুধুমাত্র নীলক্ষেত ও পলাশী মোড় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ চারুকলা প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হন। অনেকেই প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তোলার আনন্দে মেতে ওঠেন। ছোটদের মধ্যেও দেখা যায় নববর্ষের আগমনী উল্লাস।
অন্যদিকে, শোভাযাত্রার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। পুরো এলাকা জুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং শোভাযাত্রার পথের পাশাপাশি এর আশেপাশের এলাকাতেও জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।