চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই সনদ’। এতে মৌলিক সংস্কার কতটা এবং কীভাবে স্থান পায় সে দিকে কড়া নজর রাখছে জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে জটিলতা তৈরি হতে যাচ্ছে বলে মনে করে দলটি। গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতিতেও ধীরগতি হিসেবে দেখছে এনসিপি। সংস্কার ও বিচারের সুরাহা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে সরকারের সাম্প্রতিক ভূমিকা কোনো একটি পক্ষে যাচ্ছে বলে মনে করছে দলটির অনেক নেতা। এমন পরিস্থিতিতে জুলাইয়ের মূল আকাঙ্ক্ষা অনেকটা ভূলুণ্ঠিত হওয়া এবং নতুন করে ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা দেখছে দলটি। ফলে টেবিলের আলোচনার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত ফয়সালার জন্য চলতি মাসেই রাজপথের কর্মসূচিতে যাচ্ছে এনসিপি।
এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি হয়েছে, অনিশ্চয়তার জায়গা তৈরি হয়েছে, সেটা টেবিলের আলোচনায় যাতে সমাধান হয় সেই আশাবাদ আমরা রাখতে চাই। কিন্তু যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো গাফিলতি হয় বা কোনো ধরনের অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়Ñতাহলে আমরা মাঠের কর্মসূচি গ্রহণ করব। সারা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে রাজপথের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, জুলাইজুড়ে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ করে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে এনসিপি সারা দেশে বড় শোডাউন করেছে। দলটি গত মাসের শেষ দিকে শুরু করে সারা দেশে ‘উঠানে নতুন সংবিধান’ নামে উঠান বৈঠক কর্মসূচি। গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে রাজপথের কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে দলটি। এর মধ্যে সারা দেশে বিক্ষোভ, সমাবেশসহ নতুন ধরনের কর্মসূচি থাকবে। এছাড়া জুলাইয়ের পক্ষের শক্তিগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, ‘কোনো দলীয় বা ব্যক্তির সততার ওপর নির্ভর করে জুলাই সনদের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক সংস্কার আটকে রাখা যাবে না। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। সেটি না হলে আন্দোলনের মাঠে, রাজনীতির মাধ্যমে এর ফয়সালা করতে হবে। আমরা পুরোপুরি রাজপথের আন্দোলনের ভরসা রাখতে সক্ষম আছি। এ ক্ষেত্রে যারা একমত থাকবেন, তাদের সঙ্গে কথা বলব। শুধু টেবিলের ঐকমত্য না, রাজপথের ঐকমত্যও একসঙ্গে দেখাতে রাজি আছি।’
সামান্তা শারমিন আরো বলেন, ‘আমরা জেলায় জেলায় সমাবেশ, পদযাত্রা করেছি। গণপরিষদ, নতুন সংবিধানের কথা বলেছি। এখন উপজেলায় উঠান বৈঠক করছি। উভয় ক্ষেত্রেই আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ফলে খুব সহজেই আমরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব। এখান থেকেই রাজপথের সেই আন্দোলন শুরু হবে।’
এনসিপি নেতারা জানান, চলতি মাসেই স্বৈরাচার হাসিনাসহ জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির ক্ষেত্রে ধীরগতি, পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ না করা, দোসরদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার চক্রান্ত, প্রশাসন ও আমলা দোসরদের গোপন তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়া, স্ট্যাবলিশমেন্ট-বুরোক্রেটদের নানামুখী ষড়যন্ত্র এবং দেশে ও দেশের বাইরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নিয়ে সোচ্চার হচ্ছে এনসিপি।