ঠিক এক বছর আগের আজকের এই দিন। ৫ আগস্ট, ২০২৪। এটি শুধু ক্যালেন্ডারের একটি তারিখ নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক মোড় পরিবর্তনকারী দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে যে স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছিল জুলাই মাসে, সেই আগুনই গণঅভ্যুত্থানের দাবানল হয়ে ওঠে এই দিনে। যার উত্তাপে গলে গিয়েছিল দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারের ভিত, এবং সূচিত হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়ের।
এক বছর পর ফিরে তাকালে স্পষ্ট হয়, ৫ আগস্ট কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এর প্রেক্ষাপট রচিত হয়েছিল জুলাই মাসজুড়ে চলা শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলন এবং তার উপর নেমে আসা চরম দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে। কোটা সংস্কারের রায়কে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন দ্রুতই সাধারণ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষের সমর্থন পায়। কিন্তু জুলাইয়ের শেষ দিকে আন্দোলনকারীদের উপর নেমে আসা সহিংসতা, নির্বিচারে গুলি, এবং শত শত তরুণের মৃত্যু পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে।
জুলাই আন্দোলনের শেষে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান এবং দেশব্যাপী অঘোষিত কারফিউ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। কিন্তু মানুষের ক্ষোভ দমানো যায়নি। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ এবং সুশীল সমাজ এই দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে ৩ ও ৪ আগস্ট। ‘চলো চলো ঢাকা চলো’ ডাকে সাড়া দিয়ে লাখো মানুষ রাজধানীমুখী হয়। দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক হয়ে উঠেছিল জনতার স্রোত।
অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক ৩৬ জুলাই(৫ আগস্ট)। সেদিন সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকা ছিল জনতার দখলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিরোধ একসময় জনতার সম্মিলিত শক্তির কাছে নতিস্বীকার করে। বিকেলের দিকে যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন, তখন শাহবাগ, পল্টন, ফার্মগেটসহ সারা দেশের রাস্তায় নেমে আসে উল্লসিত জনতা। তাদের সবার মুখে ছিলো হাসি আর চোখে বিজয়ের আনন্দ।
এদিন রংপুরে বিজয় মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাস করতে করতে সবাই সমবেত হয়েছিলো টাউনহলে। অনেকেই মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন, স্লোগান দিচ্ছিলেন: পালাইছে রে পালাইছে, খুনি হাসিনা পালাইছে।
আজ এক বছর পর, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ৫ আগস্টের স্মৃতি এখনো অমলিন। এই দিনটি একদিকে যেমন ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর, তেমনই भाবী শাসকদের জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা। এই দিনটি বারবার মনে করিয়ে দেয়—জনতার কণ্ঠকে রুদ্ধ করা যায় না, এবং ক্ষমতার উৎস জনগণই। আজকের এই দিনে সেই নাম না জানা শত শহিদকে স্মরণ করছে গোটা জাতি, যাদের রক্তের বিনিময়ে এসেছিল এই ঐতিহাসিক পরিবর্তন।