মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের একটি মামলায় সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলককে আজ বুধবার সকাল আটটার দিকে কারাগার থেকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে আনা হয়। তাঁকে রাখা হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এই মামলায় পরে হাজতখানা থেকে পলককে আদালতকক্ষে নেওয়া হয়। আজ এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে তা আজ দাখিল হয়নি। শুনানি শেষে পলককে আদালতকক্ষ থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে হাজতখানা থেকে বের করে পুলিশ।
তখন দেখা যায়, পলকের দুই হাত পেছনে নিয়ে পরানো রয়েছে হাতকড়া। তাঁর মাথায় পুলিশের হেলমেট। বুকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট।
হাজতখানার অদূরে রাখা ছিল প্রিজনভ্যান। সেদিকে পলককে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। এ সময় পলকের কাছাকাছি চলে আসেন কিছু মানুষ। তাঁরা পলকের এলাকার (নাটোর) লোক বলে জানান তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন।
এই লোকদের দেখে পলক হাসতে থাকেন। কয়েকজন পলককে উদ্দেশ বলতে থাকেন, ‘আপনার জন্য দোয়া করি।’ তখন পলক তাঁদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন।
ততক্ষণে পলককে প্রিজনভ্যানের ভেতরে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রিজনভ্যানে তুলে তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে পরিয়ে দেওয়া হাতকড়া পুলিশ খুলে দেয়। তাঁর মাথারও হেলমেট খুলে নেওয়া হয়।
এরপর দেখা যায়, প্রিজনভ্যানের ভেতরে দাঁড়িয়ে পলক তাঁর মাথা উঁচু করে লোহার ফোকর দিয়ে লোকজনের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন। সবাই সাবধানে থাইকেন।’
তখন একজন বলেন, ‘কোনো টেনশন কইরেন না, ভাই।’ এ কথা শোনার পর পলক কাঁদতে শুরু করেন। তখন সেই লোক বলতে থাকেন, ‘পলক ভাই, কাইন্দেন না।’
একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত হন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। কিছু পরেই প্রিজনভ্যানটি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হয়। পলক প্রিজনভ্যানের ভেতরে চুপচাপ বসে থাকেন।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হন। গত বছরের ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার হন পলক। তাঁর আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর মক্কেলকে ৭০টি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মোট রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে ৬২ দিন। তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো রাজনৈতিক।
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর পলক ও তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। এই মামলায় গত ৬ জানুয়ারি পলককে গ্রেপ্তার দেখানো।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পলক ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান।