পুরুষদের “ভালো স্বামী” হিসেবে গড়ে তুলতে সেনেগালে বিশেষ স্কুল চালু করেছে জাতিসংঘ। “স্কুল ফর হাজবেন্ড” নামের এই স্কুলে শেখানো হয় কীভাবে একজন পুরুষ ভালো স্বামী হতে পারেন। সেই স্কুল একদিন ঘুরে দেখেছে বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। গৃহস্থালী কাজে পুরুষদের কেন স্ত্রীকে সাহায্য করা উচিৎ এই বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন ৫৩ বছর বয়সী ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান।
ক্লাসে তিনি বলছিলেন, “এমনকি নবীজীও (সা.) বলেছেন, যে পুরুষ তার স্ত্রী-সন্তানকে কাজে সাহায্য করে না সে ভালো মুসলিম নয়।”
পশ্চিম আফ্রিকার অনেক দেশের মতো সেনেগালেও পরিবারের বড় কোনো সিদ্ধান্তে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য বা গৃহসংক্রান্ত বিষয়ে নারীদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। এমনকি নারীদের একান্ত বিষয়গুলোর জন্যও পরিবারের পুরুষ সদস্যের “অনুমতি” নিতে হয়। এই বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনতে দেশটিতে বিশেষ এই কর্মসূচি চালু করেছে জাতিসংঘ।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য সমাজের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে ইতিবাচক পুরুষত্ব (পজিটিভ ম্যাসকুলিনিটি) জাগিয়ে তোলা।
ইমাম ইব্রাহীম ডায়ান এপিকে জানান, পুরুষদের সচেতন করতে তিনি ধর্মীয় প্রেক্ষাপট টানেন। কারণ এই অঞ্চলের মানুষ ধর্মের প্রতি প্রচণ্ড সংবেদনশীল। জেন্ডার এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কেও পুরুষদের সচেতন করার চেষ্টা করেন তিনি। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা থেকে শুরু করে এইচআইভির মতো রোগ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।
শুক্রবার জুমার নামাজের পরের খুৎবাতেও এসব নিয়ে আলোচনা করেন ইব্রাহীম। তিনি বলেন, “অনেক নারী আমার খুৎবার প্রশংসা করেন। তারা আমাকে জানান যে, তার খুৎবা এবং স্কুল ফর হাসবেন্ডের ক্লাসগুলো করার পর তাদের স্বামীদের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।”
এমনকি পুরুষেরাও তাকে জানিয়েছেন যে, তারা এখন একজন স্বামী এবং বাবা হিসেবে নিজেদের আরও উন্নত করতে চান।
৬০ বছর বয়সী হাবিব ডিয়ালো নামের এক পুরুষ বলেন, “আমার ছেলের বউ যখন অন্তঃস্বত্ত্বা ছিল, তখন আমি তাদের হাসপাতালে ডেলিভারি করাতে উৎসাহিত করি। যদিও প্রথমে আমার ছেলে একটু আপত্তি করছিল। হাসপাতালে খরচ কেমন হবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল সে। কিন্তু আমি যখন তাকে বুঝিয়ে বলি যে এটা তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য কতটা জরুরি তখন যে বুঝতে পারে এবং রাজি হয়।”
খারি নডেয়ে নামের ৫২ বছর বয়সী এক নারী জানান, তার স্বামী আগে কোনো কাজেই হাত লাগাতো না, কিন্তু এখন তিনি রান্নাও করেন।
সেনেগালে এই কর্মসূচিটি ২০১১ সাল থেকে চালিয়ে আসছে জাতিসংঘ। সেনেগালজুড়ে এই প্রকল্পের প্রায় ২০টি স্কুল রয়েছে। এই কর্মসূচিতে নারী অধিকার, সমতা এবং নিরাপদ যৌনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
তবে, এই প্রকল্পে কাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে তা বাছাই করে জাতিসংঘ। যারা সামাজিকভাবে সম্মানিত, নারী অধিকার সম্পর্কে সচেতন, নেতৃত্বের গুণ রয়েছে এমন পুরুষদেরই বাছাই করা হয়। যেহেতু নিজ নিজ এলাকায় তাদের একটা আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পরবর্তীতে সেই গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে প্রশিক্ষণে যা শিখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, তা বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন তারা।