পালানোর অভিযোগে তিনজন পুলিশ সুপারসহ ১৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।
বরখাস্ত এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে আটজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং দুইজন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রয়েছেন।
এছাড়া স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় আরেক সহকারী পুলিশ কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পৃথক ১৪টি প্রজ্ঞাপনে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
পলায়নের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- রংপুর জেলার সাবেক এসপি মো. শাহজাহান, নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, এটিইউ’র সাবেক এসপি ছানোয়ার হোসেন, ডিএমপির রমনা বিভাগের সাবেক এডিসি শাহ আলম আখতারুল ইসলাম, তেজগাঁও বিভাগের সাবেক এডিসি রুবাইয়াত জামান ডিএমপির সাবেক এডিসি এস এম শামীম, সাবেক এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম, ডিবির সাবেক এডিসি মিশু বিশ্বাস, এপিবিএন’র অতিরিক্ত এসপি হাসানুজ্জামান মোল্যা, বরিশাল র্যাব-৮ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত এসপি মাসুদুর রহমান মনির,এছাড়া স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় আরেক সহকারী পুলিশ কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এসব প্রজ্ঞাপনে স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি ২৬ জুন সই করেছেন। তবে সেগুলো রোববার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে এসব কর্মকর্তা নিয়ম অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের সময় রংপুর জেলার সাবেক এসপি মো. শাহজাহান। তার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বর্তমানে চট্রগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত শাহজাহান গত ১৬ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
“সরকারি বিধিমালা অনুসারে পলায়নের অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।”
একইভাবে নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল এবং পুলিশের সন্ত্রাস দমনের বিশেষায়িত ইউনিট এটিইউ’র সাবেক এসপি ছানোয়ার হোসেন বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় গত ১ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
বরখাস্ত অন্য কর্মকর্তারা হলেন
কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় আরও ১০ কর্মকর্তাকে পলায়নের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা মহানগরের রমনা বিভাগের এডিসি ছিলেন অতিরিক্ত এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা শাহ আলম আখতারুল ইসলাম। পরে তাকে সিলেট ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়। সেই কর্মস্থলে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে তিনি অনুপস্থিত।
>> ডিএমপির আরেক সাবেক এডিসি এস এম শামীম ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
>> ডিএমপির আরেক সাবেক এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছিল কক্সবাজার এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে। সেখানে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি অনুপস্থিত।
> ট্রায়াথলেট হিসেবে মালয়েশিয়ার আয়রনম্যান পুরষ্কার জিতে খ্যাতি পাওয়া ঢাকা মহানগর ডিবির সাবেক এডিসি মিশু বিশ্বাসকে সবশেষ জামালপুর ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়েছিল। সেই কর্মস্থলে ২০২৪ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে তিনি অনুপস্থিত।
>> রাঙ্গামাটিতে এপিবিনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সংখ্যাতিরিক্ত এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া) হাসানুজ্জামান মোল্যা গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ডিআইজির অনুমতি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
>> ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক এডিসি রুবাইয়াত জামান সর্বশেষ সুনামগঞ্জ ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। সেখানে ২৯ জানুয়ারি থেকে তিনি অনুপস্থিত।
> বরিশাল র্যাব-৮ এর ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত এসপি মাসুদুর রহমান ২০২৪ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
> নৌ পুলিশের অতিরিক্ত এসপি জাহাঙ্গীর হাছান হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যেতে ১৫ দিনের ছুটি নেন। তার ছুটি মঞ্জুর হয় ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর। ৮ অক্টোবর কর্মস্থল ত্যাগ করেন। পরে ২৩ অক্টোবর সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় আরও ৬০ দিনের ছুটি বাড়াতে ই-মেইলে আবেদন করেন। তার আবেদন মঞ্জুর হয়। এরপর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
>> রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম ভবনের এএসপি মাহমুদুল হাসান গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
> কক্সবাজার উখিয়া এপিবিনের এএসপি মোহাম্মদ ইমরুল গত ২৮ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত।এ
এছাড়া পৃথক প্রজ্ঞাপনে স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার আল ইমরান হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রামের আমলী আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে স্ত্রীর ২০২০ সালের দায়ের করা মামলায় ২০২১ সালে আল ইমরানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মোকদ্দমা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণকারী অবহিত করার কথা থাকলেও তিনি সেটি করেননি। এ কারণে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে (গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির দিন) তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হল।
এর আগে গত বছরের ২২ এপ্রিল আল ইমরান হোসেনের এক বছরের বেতন বাড়নোর প্রজ্ঞাপন স্থগিতকরণের লঘুদণ্ড দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তখন বলা হয়েছিল, তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে বিয়ে করলেও সেই তথ্য গোপন করেছেন। পরে ২০২০ সালে তার স্ত্রী রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনারের কাছে স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের দুদিন পর স্ত্রীকে তালাকের নোটিস পাঠান আল ইমরান।
তার স্ত্রীর দায়ের করা ওই অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২০২৪ সালে লঘুদণ্ড দেওয়া হয়। এবার সাময়িক বরখাস্ত হলেন তিনি।