শিরোনাম
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহিন সরকারকে বহিষ্কার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান-এমডিসহ চার জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ‎বগুড়ায় বাস-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী নিহত, আহত ৩ পাঠ্যবইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ প্রত্যাহারের প্রস্তাবে এনসিটিবির ‌‘না’, হবে সংক্ষেপন পিতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়ার পরিকল্পনা, মানতে হবে ৩ শর্ত তিন বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের অভিযোগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী গ্রেফতার নকল ওষুধ বিক্রি করায় লাজফার্মাকে জরিমানা উপদেষ্টা আসিফের একার সিদ্ধান্তে প্রকল্পে ১২০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে : পান্না জাতীয় পার্টি জিন্দা লাশ: শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ দুই হাজার: পিনাকী ভট্টাচার্য
মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০১:১৯ পূর্বাহ্ন

পাঠ্যবইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ প্রত্যাহারের প্রস্তাবে এনসিটিবির ‌‘না’, হবে সংক্ষেপন

ডেস্ক রিপোর্ট / ৯ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৫

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবই থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে পূর্ণাঙ্গ ভাষণের পরিবর্তে সংক্ষেপিত রূপ শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

সোমবার (১৮ আগস্ট) এনসিটিবি কার্যালয়ে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন নিয়ে আয়োজিত সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। যদিও এর আগে ৮ম শ্রেণির বই থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত পুস্তক পর্যালোচনাকারী শ্রেণি শিক্ষকবৃন্দ। এছাড়াও সভায় জুলাই আন্দোলন নিয়ে লিখিত ‘আমাদের নতুন গৌরব গাঁথা’ প্রবন্ধে খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি গণহত্যার ইতিহাস থেকে ‘সুকৌশলে’ শেখ হাসিনার নাম বাদ যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন প্রস্তাবকারী।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্রেণি শিক্ষকদের পরামর্শে প্রাথমিকভাবে ভাষণটি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও বৈঠকে থাকা শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যপুস্তক থেকে সরানোর বিপক্ষে অবস্থান নেন। বিষয়টি নিয়ে সভায় উচ্চবাচ্য বিনিময় হলেও আলোচনার পর ৮ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন ভাষণের মূল চেতনা ও বার্তা অক্ষুণ্ন রেখে নির্বাচিত অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘৮ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে আগেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল। এটি সংক্ষিপ্ত আকারে রাখা হবে। একাদশ শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য হবে। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা উপদেষ্টা জানাবেন।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ৭ মার্চের ভাষণ বইয়ে রাখার পক্ষে কঠোর অবস্থান নেন। তারা এ ভাষণকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে পাঠ্যবইয়ে রেখে দেওয়ার পরামর্শ দেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের অপর একটি পক্ষ বিরোধীতা করলেও সেটি টেকেনি। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উচ্চবাচ্য বিনিময় হয়। পরবর্তীতে ৮ম শ্রেণির বইয়ে ভাষণ সংক্ষিপ্ত আকারে রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে এনসিটিবির শীর্ষ এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে হট্টগোল হয়েছে। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ অনেকেই এটিকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে বইয়ে রেখে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে তারা এটিকে সংক্ষিপ্ত আকারে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। ফলে ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যবইয়ে থেকে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনার নাম গোপনের চেষ্টা

নবম-দশম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য অংশে অন্তর্ভুক্ত ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ গদ্যটি নিয়ে সংশোধন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবকারী মনে করছেন, গদ্যটিতে সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম কৌশলে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ‘আমাদের নতুন গৌরব গাঁথা’ প্রবন্ধে জুলাইয়ের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ করেছেন সংশোধনের প্রস্তাবকারী। প্রস্তাবকারীর মতে, এতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট ও বাস্তব চিত্র বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপরাধী ও অনুঘটকদের নাম ও কার্যকলাপ চতুরতার সঙ্গে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। গদ্যে ব্যবহৃত কিছু শব্দ পরিবর্তনেরও দাবি জানিয়েছেন প্রস্তাবকারী। যেমন—‘শাসক’, ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’, ‘তার আছে দলীয় বাহিনী’ এবং ‘আন্দোলনকারী ছাত্র জনতা’ শব্দগুলোর পরিবর্তে যথাক্রমে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’, ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী’ ব্যবহার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অভিযোগকারী বলছেন, বিস্ময়কর মুন্সিয়ানায় রচনাটিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম সুকৌশলে গোপন করা হয়েছে। এই রচনা পড়ে একদমই বোঝার উপায় নেই যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল শতাব্দীর ঘৃণ্যতর ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। অধিকন্তু এতে জুলাইয়ের খণ্ডিত চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। বিশেষত ফ্যাসিবাদী সরকারের নৃশংসতা, মানুষের বিস্ময়কর বিস্ফোরণ ও অনন্য বৈপ্লবিক মুহূর্তের ঝাঁজ রচনাটিতে পুরোমাত্রায় অনুপস্থিত। এর সাহিত্যমানও যথেষ্ট লঘু।

বেশি পরিবর্তনের প্রস্তাব নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে

এনসিটিবিতে আয়োজিত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের সভার চেকলিস্ট ঘেঁটে দেখা গেছে, ৮ম শ্রেণির বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ ছাড়াও হুমায়ুন আজাদ, আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মতো বিতর্কিত লেখকদের লেখা পর্যালোচনার অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবইয়ে।

একই বইয়ের ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ এই নাটকের চেয়ে সাবলীল শুদ্ধ ও রুচিশীল এবং ভাষাতাত্ত্বিক অনেক ভালো নাটক আছে সেগুলোকে এখানে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অশ্রাব্য এবং কটু ভাষা, বাক্যের জন্য এটাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নাটকটির সংলাপে বেশ কিছু গালি ব্যবহার করা হয়েছে। শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য এটি স্বভাবতই অস্বস্তি তৈরি করবে। উপরন্তু নাটকটি সাহিত্যিক মানদণ্ডে অদ্বিতীয় মূল্য ও তাৎপর্য বহন করে না বলে জানিয়েছেন প্রস্তাবকারী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ