লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে গত বুধবার (২ জুলাই) রাতে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম থানা-পুলিশের দায়ের করা দুই মামলায় আরো চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) পাটগ্রাম থানায় ও একইদিন হাতীবান্ধা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি করে মামলা করে। উভয় মামলায় ২৭ জনের করে নাম উল্লেখ ও অগনিত অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় দুইদিনে অভিযান চালিয়ে মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলার ৫৪ জন নামীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।
পাটগ্রাম থানার করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- সাবেক ছাত্রদল নেতা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে এক মাসের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহেল রানা, বাউরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাবিউল ইসলাম ও পাটগ্রাম পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি মাসুদ রানা।
অপরদিকে আসামিদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া ও থানায় হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপল ও পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদ হোসেন রাব্বিকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি ও কেন্দ্রীয় যুবদল।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জয়নুল আবেদীন স্বপন ও কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভুইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় বহিষ্কার করার উল্লেখ করা হয়। পাটগ্রাম থানা-পুলিশের দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি বাদশা জাহাঙ্গীর মোস্তাজির চপল ও দুই নম্বর আসামি মাহমুদ হোসেন রাব্বি।
থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ৩ জুলাই রাতে পাটগ্রাম থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) হামিদুর রহমান প্রধান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে থানায় হামলা ভাঙচুর, আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারীকে মারধর, সরকারি সম্পদের ক্ষতি ও চুরি এবং ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। একইদিন হাতীবান্ধা থানার সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) সাহেদুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের কাজে বাধা, পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে এ মামলা করা হয়।
শুক্রবার রাতে ও শনিবার দিনে হাতীবান্ধা এবং পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ও পুলিশের মামলায় ২৭ নম্বর আসামি সাবেক ছাত্রদল নেতা সোহেল রানা ও পুলিশের তদন্তে প্রাপ্ত অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্যে রাবিউল ইসলাম এবং মাসুদ রানা। হাতীবান্ধা থানার পুলিশের মামলার প্রধান আসামি ও হাতীবান্ধা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক খন্দকার নূরনবী কাজলকে গ্রেপ্তার করেছে থানা-পুলিশ।
এদিকে পাটগ্রাম থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার ও উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা ও পৌর বিএনপি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পাটগ্রাম পূর্ব বাজারের বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান। এতে তিনি দাবি করেন, থানায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু কিছু গণমাধ্যমে এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। দলের নাম ভাঙিয়ে কোনো ব্যক্তির অপকর্মের দায় বিএনপি অতীতেও নেয়নি, ভবিষ্যতেও নিবেনা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা বিএনপি।
এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা থানার ওসি মাদমুদুন-নবী বলেন, পুলিশের মামলায় ২৭ জন নামীয় আসামির মধ্যে ১ নম্বর আসামি খন্দকার নূরনবী কাজলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশি প্রহরায় বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।