পাকিস্তানে মেঘভাঙা বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩৫০। এর মধ্যে দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের, বাজাউর এবং বাটগ্রামেই সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে।
এদিকে, পাখতুনখোয়ার স্বাবি জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণে নতুন করে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৮ আগস্ট) ব্যাপক বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বহু ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ভূমিধসের ঘটনায় অনেক মানুষ ভেসে গেছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। (পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন-এর খবর)
স্বাবির ডেপুটি কমিশনার নসরুল্লাহ খান দ্য ডনকে জানান, হঠাৎ ভূমিধসে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। জেলার পার্বত্য এলাকায় ভূমিধস নেমেছে। গাদুন আমাজাই পার্বত্য এলাকায় বন্যা ও ভূমিধসে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে তথ্য সীমাবদ্ধতার কারণে ডেপুটি কমিশনার মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেননি। যার ফলে পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
প্রাদেশিক সেচমন্ত্রী আকিবুল্লাহ খান বন্যাকবলিত দালোরি সফরে গিয়ে বলেন, প্রবল বর্ষণে ২০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং অন্তত ৩৩ জন এখনও নিখোঁজ। তবে প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানায়, ভয়াবহ বৃষ্টিতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে, উদ্ধার তৎপরতা দলের মুখপাত্র বিলাল ফয়েজি বলেন, স্বাবিতে ১১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। আর স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী ১৭–১৮ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সরকারি হিসাবে গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পুরো খাইবার পাখতুনখোয়ায় অন্তত ৩৪১ জন মারা গেছেন।
স্থানীয় এক অধিবাসী আমজাদ গুল জানান, দালোরি থেকে মরদেহ উদ্ধার করা রীতিমতো অসম্ভব পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখনও অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
অতিবৃষ্টির কারণে ঘরে পানি ঢুকে গেলে মানুষ ছাদে আশ্রয় নেয় বা নিরাপদ জায়গায় সরে যায়। তখন আবার ভূমিধসের কারণে পুরো এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। ফসল নষ্ট হয়ে যায় এবং রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ত্রাণ কার্যক্রমে সহায়তা করতে ফেডারেল মন্ত্রিসভা তাদের এক মাসের বেতন অনুদান দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে।
প্রাথমিক হিসাবে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি প্রায় ১২৬ মিলিয়ন রুপি ছাড়িয়েছে।
ইউনিসেফ গত সোমবার জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই খাইবার পাখতুনখোয়া ও গিলগিত–বালতিস্তানের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ওষুধ পাঠিয়েছে। প্রয়োজনে সরকারের সমন্বিত ত্রাণ কার্যক্রমকে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছে, যাতে শিশু ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।