প্রথম ম্যাচে হারার পর লিটন কুমার দাস বলেছিলেন, “ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং কিছুই ভালো করিনি আমরা।” দ্বিতীয় ম্যাচের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক বলতে পারেন,”ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং, সবই আরও জঘন্য করেছি আমরা।” পারফরম্যান্স যে বলছে সেটিই! আগের ম্যাচে তবু কিছুটা লড়াই হয়েছিল রান তাড়ায়। এবার একদমই একপেশে ম্যাচ। আরেকটি বড় পরাজয়ের সঙ্গে লিটনদের প্রাপ্তি তাই সিরিজ হার।
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিত করল পাকিস্তান। দেশের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল তারা প্রায় সাড়ে তিন বছর পর।
পাকিস্তানের স্কোর ছিল ঠিক আগের ম্যাচের সমান, ২০ ওভারে ২০১। দলকে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেন ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের সুনামি বইয়ে দিয়ে জাতীয় দলে ফেরা সাহিবজাদা ফারহান। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আগের ৯ ইনিংসে তার রান ছিল মোট ৮৬। ফেরার ম্যাচে ৪১ বলে ৭৪ রানের ইনিংস উপহার দেন তিনি ছয়টি ছক্কায়।
তবে জীবন পান তিনি তিন দফায়। কোনোটিই অবশ্য সহজ ছিল না, তবে কোনোটি নাগালের বাইরেও ছিল না।
বাংলাদেশ ভুগেছে শরিফুল ইসলামের চোটের কারণেও। কুঁচকিতে টান লাগায় স্রেফ তিন বল করেই মাঠ ছাড়েন বাঁহাতি এই পেসার। পরে আর ফিরতে পারেননি মাঠে।
রান তাড়ায় শুরুতে আশা জাগিয়ে পরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। বিব্রতকর অবস্থা থেকে শেষের দিকে তানজিম হাসান ৩০ বলে ৫০ রানের ইনিংস কিছুটা কমায় ব্যবধান। ৯ নম্বরে নেমে বাংলাদেশের রেকর্ড ইনিংস এটি।
অথচ বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুটা ছিল চমক জাগানিয়া। দুই বাঁহাতি ওপেনারের জন্য সালমান আলি আগা বোলিং শুরু করেন তার অফ স্পিন দিয়ে। পাকিস্তান অধিনায়ককে দুটি চারের পর এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ছক্কায় ওড়ান তানজিদ হাসান। বাঁহাতি এই ওপেনারের ব্যাটের দাপটে হাসান আলির করা পরের ওভার থেকে আসে ১৫ রান।
প্রথম দুই ওভারেই ৩২! তৃতীয় ওভারে ফাহিম আশরাফকেও বাউন্ডারিতে স্বাগত জানান তানজিদ। এরপরই কমতে থাকে রানের গতি। একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা-যাওয়ার মিছিলে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং লাইন আপ।
হারিস রউফকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় পারভেজ হোসেন ইমনের (৭ বলে ৮) আউট দিয়ে শুরু। পরের ওভারে ফাহিমের লেগ স্টাম্পে থাকা বলে আউট হয়ে যান তানজিদ (১৯ বলে ৩৩)। শর্ট ফাইন লেগে দারুণ এক রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন আবরার আহমেদ।
আগের ম্যাচে অর্ধশত রানের জুটি গড়া লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয় এবার ব্যর্থ। রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে হৃদয়ের ওপর চটে গিয়েছিলেন লিটন। মেজাজ ও মনোযোগ হারিয়ে পরের বলেই আউট হন তিনি বজে শটে। শততম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ অধিনায়ক ফেরেন ৯ বলে ৬ করে।
পরের ওভারেই আবরারকে সুইপ করতে গিয়ে আউট হৃদয় (৫ বলে ৫)। নতুন ব্যাটসম্যান জাকের আলি প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ লেগ স্পিনারের গুগলিতে পুরোপুরি ধোঁকা খেয়ে।
বিনা উইকেটে ৪৪ রান থেকে বাংলাদেশের রান হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৫৬!
শামীম হোসেন ক্রিজে গিয়ে আবরারের হ্যাটট্রিক ডেলিভারি পাঠান বাউন্ডারিতে। তবে একটু পর এই লেগ স্পিনারের বলেই বিদায় নেন তিনি (৯ বলে ৭)। রিশাদ হোসেনর ব্যাট নিশ্চুপ আবার (১)।
৭ উইকেটে ৭৭ রান থেকে দলকে একশ পার করান মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানজিম হাসান। একাদশে ফেরা মিরাজ ১৭ বলে ২৩ করে আউট হলেও তানজিম তার ব্যাটিং সামর্থ্যের ছাপ রাখেন। অনিয়মিত বোলারদের দিয়ে শেষ সময়টা পার করেন পাকিস্তান অধিনায়ক। পুরো ফায়দা নিয়ে ৩০ বলে ফিফটি করেন তানজিম। ৯ নম্বরে বাংলাদেশের আগের সর্বোচচ ছিল তাসকিন আহমেদের ৩১।
ফিফটির পরই থেমে যান তানজিম। শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংসও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ২০ ওভারে ২০১/৬ (সাহিবজাদা ৭৪, সাইম ৪, হারিস ৪১, নাওয়াজ ৫১*, সালমান ১৯, শাদাব ৭, ফাহিম ১, মিরাজ ৪-০-৩৮-০, শরিফুল ০.৩-০-২-০, শামীম ৩.৩-০-২৮-০, হাসান ৪-০-৪৭-০, তানজিম ৪-০-৩৬-২, রিশাদ ৪-০-৫০-১)
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১৪৪ (তানজিদ ৩৩, পারভেজ ৮, লিটন ৬, হৃদয় ৫, মিরাজ ২৩, জাকের ০, শামীম ৭, রিশাদ ১, তানজিম ৫০, হাসান ৮*, শরিফুল আহত অনুপস্থিত; সালমান ২-০-২০-০, হাসান ২-০-২১-১, ফাহিম ২-০-৮-১, রউফ ২-০-২৩-১, আবরার ৪-০-১৯০৩, শাদাব ২-০-১৩-১, খুশদিল ৩-০-২৫-১, সাইম ২-০-১৪-১)।
ফল: পাকিস্তার ৫৭ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তান ২-০তে এগিয়ে।