নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাকে অফিস সহায়ক পদে ভুয়া নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। খোদ প্রধান শিক্ষক বলছেন বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোন পদ নেই। নৈশপ্রহরী পদে একটি পদ আছে কিন্তু মামলার কারনে ওই পদে নিয়োগ স্থগিত রয়েছে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাগুড়া ইউনিয়নের মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মহিউদ্দিনের পুত্র মোকাদ্দেস মিয়ার বাড়ি। বিদ্যালয়ের কাছাকাছি বাড়ি হওয়ায় বিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে প্রধান শিক্ষক মাবিয়া খাতুন তাঁকে ডাকতেন এবং সহযোগিতা নিতেন। অভিযোগ রয়েছে মোকাদ্দেস মিয়া নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সংঙ্গে জড়িত থাকার সুবাধে ও সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নুর মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ট হওয়ার মোকাদ্দেস মিয়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে গোপনে ২০২৪ সালের তৎকালিন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে অফিস সহায়ক পদে ভুয়া নিয়োগ বাগিয়ে নেয়। আন্দোলন পরবর্তী আওয়ামীলীগ সরকার টিকে গেলে তাঁর পদ বৈধ করে নিতেন।
মোকাদ্দেস মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর বাড়িতে নিষিদ্ধ সংঘঠন ছাত্রলীগের সম্মেলনের ব্যানার টাঙ্গানো রয়েছে। বাড়িতে ছাত্রলীগের ব্যানার কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগ করিনা তাহলে ব্যানার কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ব্যানারটি আমি গত বছর ছাত্রলীগের কিশোরগঞ্জ উপজেলা শাখার সম্মেলন শেষে এনেছিলাম। তিনি এসময় বলেন, ব্যানার থাকলে কি ছাত্রলীগ হয়ে গেলাম। আমি ব্যানারটি সরিয়ে নেব। মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনি কোন পদে কর্মরত আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত আছি। আপনার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র কই। এসময় তিনি একটি পরিপত্র দেখিয়ে বলেন, আমার নিয়োগ নিয়ে আমি নিজে সন্দিহান। তবে আমার নিয়োগ পত্রে একজন যুগ্ন সচিব স্বাক্ষর করেছে। আমার যোগাযোগ যুগ্ন সচিবের সঙ্গে। যুগ্ন সচিবের মোবাইল নম্বর চাইলে তিনি তা দিতে পারেননি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহমুদা খাতুনের কাছে অফিস সহায়ক মোকাদ্দেস মিয়ার নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি আমার অফিস সহকারী নাসরিন আক্তারকে বলছি তাঁর কাছ থেকে কাগজপত্র নেন। এসময় অফিস সহকারী নাসরিন আক্তারের কাছে গেছে তিনি একটি প্রত্যায়ন পত্র ও অফিস সহায়ক পদে যোগদানের একটি যোগদান পত্রের ফটোকপি হাতে ধরিয়ে দেন। এসময় পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ পরীক্ষার তারিখসহ অন্যান্য কাগজপত্র চাইলে তিনি বলেন, শুধু এই কাগজ দুইটা ছাড়া আর কোনো ডকুমেন্ট নেই।
যোগদান পত্রটি ঘেঁটে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জ উপজেলার সাবেক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদের স্বাক্ষরিত পত্রে লেখা রয়েছে আপনি মোঃ মোকাদ্দেস মিয়া অত্র উপজেলার পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর্থিক সহায়তা ছাড়া দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন, আপনি যথাযত কর্তপক্ষের মাধ্যমে মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন করেছেন। আপনার আবেদনটি মঞ্জুর হওয়ার কারনে আপনাকে আগামী ৯—৫—২৪ ইং তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের মাধ্যমে অত্রঅফিসে যোগদান পত্র দাখিল করার জন্য বলা হল। এসময় নিয়োগ সংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। তবে একটি সুত্র জানিয়েছে মোকাদ্দেস মিয়ার নিয়োগ সম্পুন্ন অবৈধ । তাঁরপরও তিনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সরকারের অর্থ ভোগ করে চলেছেন।
একটি সুত্র জানায়, ওই অফিস সহায়ক মোকাদ্দেস মিয়ার যোগদান মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । কিন্তু তাঁর নিয়োগের বৈধতা নিয়ে ব্যাপক বির্তক সৃষ্টি হলে তড়িঘড়ি করে তাঁকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সেটিরও কোন কাগজপত্র নেই। কারন অফিসে আগে থেকেই একজন অফিস সহায়ক কর্মরত রয়েছে।
মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাবিয়া খাতুন বলেন, আমার বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোন পদ নেই। মোকাদ্দেস অফিস থেকে যোগদান পত্র নিয়ে আসায় আমি তাঁকে যোগদান করাতে বাধ্য হই। আমিতো অফিস আদেশ অমান্য করতে পারিনা। এর আগে সে কতদিন আপনার বিদ্যালয়ে বিনা বেতনে কর্মরত ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনদিন তিনি এখানে কর্মরত ছিলেননা তবে আমি মাঝে মধ্যে তাকে ডেকে কিছু সহযোগিতা নিতাম। কেমন সহযোগিতা, ধরেন কেউ আসলো সে ক্ষেত্রে চা বিস্কুট আনিয়ে নিতাম।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি যতটুকু জেনেছি তাঁকে পিডিবি ফোর প্রকল্প থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের কাগজপত্র কই জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন কাগজপত্র নেই। তাহলে তাঁকে বেতন দিচ্ছেন কিভাবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জুলাই আগষ্ট মাসে তাঁকে বেতন দেয়া হয়নি। আপাতত বেতন বন্ধ রেখেছি। ঝামেলা মিটলে বেতন চালু করব।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কুমারেশ চন্দ্রগাছির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত একটি বিষয় আমার অফিসারের কাছ থেকে জেনেছি। ওই অফিস সহায়কের নিয়োগ সঠিক উপায়ে দেয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখে বিধি অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।