• ৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ কর্মী নেবে জাপান
• দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই
• নরসিংদীর টিটিসিতে প্রশিক্ষণ দেবেন জাপানের প্রশিক্ষকরা
• প্রশিক্ষণের পর স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট নেওয়া হবে
• কৃতকার্যরাই বিনা খরচে জাপানে যেতে পারবেন
বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপান। দেশটিতে যেতে উন্মুখ বাংলাদেশি কর্মীরা। উদীয়মান সূর্যের এই দেশটিতে বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের পথ আরও প্রশস্ত হচ্ছে।
সম্প্রতি জাপানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরে দেশটি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে। এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের জাপানি ভাষা ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
গত ১ জুন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বলেন, জাপানে কর্মী পাঠানো এবং দেশটির ম্যানপাওয়ার মার্কেট নিয়ে কাজ করার অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জাপান পাঁচ বছরে এক লাখ লোক নিতে চায়। এ বিষয়ে কাজ করা হবে। এছাড়া জাপানে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ভিসা জটিলতা তৈরি হতো তা সমাধানেও আলোচনা হয়েছে।
গত ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরের সময় তিনটি জাপানি কোম্পানির সঙ্গে দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। এই সমঝোতা স্মারকটি হচ্ছে জাপানের সঙ্গে দক্ষতা ও ভাষা উন্নয়নে মানবসম্পদ বিষয়ক স্মারক।
এই সমঝোতা স্মারকের প্রথমটি বিএমইটি ও কাইকম ড্রিম স্ট্রিট (কেডিএস) এবং দ্বিতীয়টি বিএমইটি, জাপানের ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কম্বাইন্ড কোঅপারেটিভস (জাপানে ৬৫টির বেশি কোম্পানির একটি ফেডারেশন এনবিসিসি) ও জাপান বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সির (জেবিবিআরএ) মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।
জাপানের প্রশিক্ষকরাই দেবেন প্রশিক্ষণ
সমঝোতা স্মারকের ফলে জাপানের প্রশিক্ষকরা নরসিংদীর মনোহরদীতে অবস্থিত টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে (টিটিসি) ভাষা ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। প্রশিক্ষণের পর কর্মীদের স্পেসিফায়েড স্কিল ওয়ার্কার টেস্ট (এসএসডব্লিউ) নেওয়া হবে। যারা কৃতকার্য হবেন তারা বিনা খরচে জাপানে যেতে পারবেন।
এ বিষয়ে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন বলেন, সমঝোতা স্মারকের আওতায় তারা (জাপান) প্রশিক্ষণ দেবে, তারাই পরীক্ষা নেবে। তারা এসে ট্রেনিং দেবে, এটা খুবই ভালো দিক।
আশরাফ হোসেন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যেহেতু প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন সেহেতু আমরা এক লাখ কর্মী তৈরি করবো। তবে এক লাখ দক্ষ কর্মী জাপানে পাঠানো আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বিশ্বাস করি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবো। এরই মধ্যে আমরা আমাদের কাজ শুরু করেছি।’
কোন কোন সেক্টরে কর্মী যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএমইটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি এখনো সমঝোতা স্মারক হাতে পাইনি। এই যে এক লাখ লোক নেবে, স্কিল কী কী হবে? সেই অনুযায়ী কর্মীদের দক্ষ করার ক্ষমতা আমাদের আছে কি না, সেটা এখন জরুরি। এমওইউর কপি হাতে পেলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত ২৯ মে জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসে জাপানে কর্মশক্তি পাঠাতে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিএমইটির সঙ্গে কেডিএস, এনবিসিসি ও জেবিবিআরএর দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বিএমইটির প্রশিক্ষণ পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার সালাহউদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম অবস্থায় তারা নরসিংদীর ট্রেনিং সেন্টার নির্বাচন করেছে। পরে দেশের অন্যান্য ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ দিতে পারে।
জাপান যেতে কর্মীদের দুর্বলতা ভাষা ও দক্ষতা
জাপানে যাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন বেশিরভাগ কর্মী তা অর্জন করতে পারেন না। এজন্য খুব কম সংখ্যক কর্মী জাপান যেতে পেরেছেন বলে মনে করছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
তাদের ভাষ্যমতে, জাপানে যেতে হলে কর্মীদের একদিকে যেমন জাপানি ভাষা শিখতে হয়, অন্যদিকে যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হয়। জাপানের নিয়মনীতি খুবই কঠোর। অন্য দেশের সঙ্গে জাপানকে মেলানো যায় না। তাদের মানের সঙ্গে না মিললে তারা লোক নেয় না। তারা কখনো অদক্ষ লোক নেয় না। দক্ষ শ্রমিক ছাড়া জাপানে যাওয়া অসম্ভব।