আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে গেজেটের প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন (সিইসি)। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, গেজেট প্রকাশের পর দলের নিবন্ধন বিষয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রোববার (১১ মে) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, ‘যদি গেজেট প্রকাশ হয় আগামীকাল, তাহলে সেদিনই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
এ সময় সিইসি আরও জানান, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোকে পরিস্থিতি আমাদের কাছে পরিষ্কার।’
এদিকে, গত রাতে বিচারাধীন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর আগেই গতকাল রাত ১০ মে, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই সংশোধনীর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখন থেকে রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন এবং সমর্থকদের বিচার করতে পারবে।
সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হবে।’
তিনি আরও জানান, ‘এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ, সাইবার স্পেসেও। এ বিষয়ে পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে।’ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা দলটি ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকাকালে নানা বিতর্কে জড়িয়েছে। গত বছরের জুলাই-অগাস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘর্ষে দলটির ওপর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, আন্দোলনে পঙ্গু হওয়া হাজার হাজার মানুষ এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব ঘটনার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারান এবং ভারতে পালিয়ে যান। এরপর থেকে দলটির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে, এবং দলের নেতাকর্মীরা ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। ছাত্রলীগও নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। যদিও বিএনপিসহ অন্য কিছু দল এবং সরকারের অংশ থেকে কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ না করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ৭ মে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা এ দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন এবং পরে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করতে শুরু করেন। একই সময়ে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন অব্যাহত ছিল।