অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কিংবা সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো বিরোধে না জড়াতে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাচন ইস্যুতে তাদের সম্ভাব্য সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
ঈদুল আজহার দিন শনিবার (৭ জুন) রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি এ নির্দেশনা দেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাওয়া এমন দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন দাবির মধ্যে শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী বছরের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো দিন অনুষ্ঠিত হবে। এর ভিত্তিতে ওইদিন রাতেই স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠকে বসেছিল বিএনপি। নতুন রোডম্যাপের প্রেক্ষিতে বিএনপির অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত আসে। পরে স্থায়ী কমিটির বিবৃতিতে এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে দলটি।
পরদিন শনিবার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় গিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ফিরোজায় যান।
সূত্রমতে, শুভেচ্ছা বিনিময়ের একপর্যায়ে সরকার ঘোষিত নির্বাচনের নতুন রোডম্যাপের বিষয়টি উঠে আসে। নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী আবহাওয়ার সংকট, রমজানসহ নানা কারণে এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন খালেদা জিয়া। তবে একইসঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সরাসরি কোনো ধরনের বিরোধে না জড়ানোর নির্দেশও দেন।
তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে সংঘাতে গেলে বিএনপির কোনো লাভ নেই। তাই বিরোধ নয়, সংকট সমাধানে আলোচনাই শ্রেয়। সে পথেই হাঁটতে হবে। যদি ড. ইউনূস না থাকেন, তাহলে কী হবে, সেটাও তো ভাবতে হবে। তাই যুক্তির আলোকে কীভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ এগিয়ে নিয়ে আসা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এমন নির্দেশনার পর সোমবার (৯ জুন) দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। জানা গেছে, বৈঠকে খালেদা জিয়ার মতামতের ওপর বিশদ আলোচনা করা হয় এবং ‘আলোচনাই যে সমস্যা সমাধানের উপায়’, সে পথেই এগুনোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে দলটি যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা নমনীয় অবস্থানে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।