আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। দুই বছর আগে এসএসসি পাস করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর নিবন্ধন করেও এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না সোয়া চার লাখের বেশি শিক্ষার্থী। শতাংশের হিসাবে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে, আর সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে সাধারণ এইচএসসি বোর্ড।
এ বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির গণমাধ্যমকে বলেন, এমনিতেই দেখা যায় পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে এই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া। এসএসসি পাসের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তারা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি জরিপ করা হবে।
জানা গেছে, ২০২৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে ২৬ জুন। এবারে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭৩ হাজার কম। আলিম পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৮৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী, যা গতবারের তুলনায় দুই হাজার কম। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের কিছু বেশি, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় সাত হাজার কম।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৯ জন শিক্ষার্থী নিয়মিতভাবে নিবন্ধন করেছিল। এর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ১০ লাখ ৫০ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী। তবে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের যুক্ত করলে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৭৬ হাজার জন পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছে। ফলে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থী (প্রায় ২৭ শতাংশ) ফরম পূরণ করেনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে, যেখানে ৭৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেনি। এই বোর্ডে ভর্তি হয়েছিল প্রায় সোয়া তিন লাখ শিক্ষার্থী, যার মধ্যে আড়াই লাখের মতো ফরম পূরণ করেছে।
অন্যদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আওতায় আলিম প্রথম বর্ষে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে প্রায় ৭৯ হাজার। অর্থাৎ প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে একাদশ শ্রেণিতে ভোকেশনাল শাখায় রেজিস্ট্রেশন করেছিল প্রায় ১ লাখ ৫৯ হাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ফরম পূরণ করেছে ৯৫ হাজারের কিছু বেশি। ফলে প্রায় ৬৩ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, যা প্রায় ৪০ শতাংশ।