শিরোনাম
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন

তিন দশক পর আবারও পঞ্চগড়ে রেলপথে বালু পরিবহন

স্থানীয় রিপোর্ট / ১০ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫

দীর্ঘ তিন দশক পর আবারও রেলপথে ট্রেনে বালু-পাথর পরিবহন শুরু করেছে বসায়ীরা। দেশের বিভিন্নস্থানে মেগা প্রকল্পের কাজে পঞ্চগড় থেকে উন্নত বালি-পাথর পরিবহনে সিদ্ধান্ত পাল্টিয়েছে ব্যবসায়ীরা। রেল যোগাযোগ নিরাপদ এবং পরিবহন খরচ কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রেলপথে বালি-পাথর পরিবহনে এগিয়ে এসেছে।

উত্তরের জেলা পঞ্চগড় থেকে সম্প্রতি বালুভর্তি ৩০ বগির একটি ট্রেন ছেড়ে যায়। এতে পরিবহন ব্যয় ও সময় কম লাগায় খুশি শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। রেলপথে বালু পরিবহনের ফলে উত্তরে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, দেশজুড়ে পঞ্চগড়ের মোটা বালুর চাহিদা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক বালু দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। উত্তোলন, পরিবহনসহ বিভিন্ন সেক্টরে অন্তত ২০ হাজার মানুষ যুক্ত। এতদিন এখানকার বালু পরিবহনের জন্য একমাত্র বাহন ছিল ছোট-বড় ট্রাক। নামমাত্র টাকায় বালু কিনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সেটা দেশের বিভিন্নস্থানে পাঠানো হতো। এতে বালুর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। চলতি মাসের তিন জুন প্রথমবারের মতো ৩০ বগিতে বালু পরিবহন শুরু হয়। বালুভর্তি আরেকটি ট্রেন দু-একদিনের মধ্যে ছেড়ে যাবে। রেলপথে স্বল্প খরচে বালু পরিবহনের ফলে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখানকার পরিত্যক্ত সমতল জমি থেকে বালু উত্তোলন চলছে। এছাড়া জেলার ৩৪টি নদ-নদী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বালু উত্তোলন করা হয়। এসব বালু পরিবহন হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দক্ষ চালক সংকট, সড়কে নানা প্রকার চাঁদাবাজির কারণে অতিরিক্ত খরচের কারণে ট্রাকে বালু পরিবহনে অতিরিক্ত খরচ গুণতে হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কেনা বালু ঢাকা ও গাজীপুরে পৌঁছাতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হতো। আবার ট্রাক না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যবসায়ীদের। তবে রেলপথে একই পরিমাণ বালু পরিবহনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

পঞ্চগড় রেল স্টেশন এলাকায় দেখা যায় বগিতে বালু লোড হচ্ছে। সারি সারি বগি স্টেশনের ইয়ার্ডে সংযোগ করা হয়। বালি ভর্তি ট্রেনটি দু-একদিনের মধ্যে এ স্টেশন ছেড়ে যাবে। তবে যমুনা সেতু দিয়ে সরাসরি ঢাকায় বালু পাঠাতে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে ট্রাকের তুলনায় পরিবহন খরচ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে যাবে।

আব্দুল হামদ নামে এক শ্রমিক জানান, আগে অটো চালাতাম। প্রতিদিন আয় হতো প্রায় ৫০০ টাকা। ২০০ টাকা কিস্তি দিয়ে সংসার চলতো না। এখন বালু উত্তোলনের কাজ করি। প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হয়। শুনলাম এখন নাকি ট্রেনে বালু জেলার বাইরে যাচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।

বালু ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, ট্রাকে বালু পরিবহন আমাদের নানান সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় ট্রাক পাওয়া যায় না। সড়ক পথে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ট্রেনে নিয়মিত বালু পরিবহন করা হলে আমাদের অর্থ ও সময় বাঁচবে।

পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা ব্যাক্তিরা জানান, বালি-পাথর এই জেলার অর্থনৈতিক প্রাণ। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বালি-পাথর পরিবহন হচ্ছে এ জেলা থেকে। চাহিদা বাড়ায় পরিবহনের চাপ বাড়ছে সড়কে। ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক মহাসড়ক। বালি-পাথর রেলপথে পরিবহন করা গেলে এই বিড়ম্বনা কমে যাবে।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় রেলস্টেশনের মাস্টার মাসুদ পারভেজ জানান, রেলপথে বালু পরিবহনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এখান থেকে একটি মালবাহী ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে বালু পাঠাতে পারছেন। এতে ব্যবসায়ীদের আস্থাও বেড়েছে। প্রয়োজন হলে এ ট্রেনে আরও বগি সংযুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানান, স্থানীয় অর্থনীতির বড় একটি অংশের জোগান আসে বালু পাথর থেকে। নিয়মিত রেলপথে বালু পরিবহন শুরু হলে এখানকার অর্থনীতিতে বড় একটা প্রভাব পড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ