রংপুরে চিকিৎসক জিয়া হায়দার বসুনিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগীদের দাবি দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে চিকিৎসক নানান কাজে ব্যাস্ত থাকেন। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পরেন বিপাকে। মধ্যরাতের পর নানান ঝক্কি ঝামেলার মধ্য দিয়ে তাদের বাড়ি ফিরতে হয়। এসময় রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পরেন।
গত শনিবার (২ আগস্ট) এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে কালের কণ্ঠের রংপুর প্রতিনিধি খুশবু হাসান রনি, ডিআরবির স্টাফ রিপোটার মারুফ বিল্লাহ এবং নিউজ টুডে ২৪ এর রিপোটার ফেরদৌস জয় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে যান। এসময় ওই গণমাধ্যমকর্মীদের লাঞ্চিত করেন চিকিৎসকের সহকর্মীরা। অবরুদ্ধ করে রাখা হয় প্রায় দুই ঘন্টা পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।
নলডাঙ্গা থেকে ভাইকে দেখাতে এসেছেন মনছুর আলী তিনি অভিযোগ করে বলেন, পেটের সমস্যার জন্য জিয়া হায়দার বসুনিয়াকে দেখাতে আজ সকাল এগারোটায় এসেছি। কিন্তু এখানে সিরিয়াল ছাড়াও বিশেষ কিছুর বিনিময়ে রোগী দেখা হচ্ছে।এখন রাত ১২টা বাজে। দুইশো টাকার ভাড়া চারশো টাকা দিয়ে যেতে হবে। এখানে কোন নিয়ম মানা হয়না। নিয়মের মধ্যে কাজ করলে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।
নীলফামারি থেকে আসা সুমন্ত রায় অভিযোগ করে বলেন, বেলা একটার দিকে এসেছি ডাক্তার নেই প্রায় তিন ঘন্টা হলো। এখন বাড়ি ফিরবো কিভাবে যাতায়াতের অসুবিধা হবে আমার।
পঞ্চগড় থেকে আসা আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, এখানে আসছি দুপুর একটার সময়।টেষ্ট রিপোর্ট এনে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা মেলেনি। রাত বাজে বাড়োটা সিরিয়াল নাম্বার ৩৮ এখন পর্যন্ত রিপোর্ট দেখাতে পারিনি পঞ্চগড় যাবো কিভাবে সেটা জানি না। উনি যদি আগে রিপোর্ট দেখতো তাহলে বাসা ফিরতে পারতাম। মধ্যরাতে রোগীকে নিয়ে কিভাবে কি করবো জানিনা।বিপাকে পরে গেছি। গাড়ি পাব কিনা সন্দেহ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, ডাক্তার শুধু টাকা চেনে।রোগীদের সুবিধা অসুবিধা তারা বোঝেন না।আমরা পঞ্চগড় থেকে এসেছি কিভাবে বাড়ি ফিরবো জানি না। আমার রোগী এখানে থাকতে থাকতে আরো অসুস্থ হয়ে পরেছে। এখন তার কোন ক্ষতি হলে এর দায় কার?
গাইবান্ধা বোনারপাড়া থেকে আসা এক রোগীর স্বজন জানান, সকাল থেকে এখানে এসে অপেক্ষা করছি আবার ফিরবো কিভাবে জানি না। নিজের কাছেই অনেক অস্বস্তি লাগছে। রোগীর অবস্থা আরো কাহিল। এতো দেরিতে কাজ হলে আমাদের জন্য খুব কষ্টকর হয়ে যায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক জিয়া হায়দার বসুনিয়া বলেন, এন্ডোসকপি করতে গিয়েছিলাম সেকারণে দেরি হচ্ছে। প্রতিদিন এমন হয়না।আজ অনেক মুমূর্ষু রোগী ছিল তাই দেরি হচ্ছে।
বক্তব্য দেবার এক পর্যায়ে চিকিৎসা জিয়া হায়দার বসুনিয়া উত্তেজিত হয়ে পরেন। তার পাশে থাকা সহকারীরা গণমাধ্যম কর্মীদের উপর চড়াও হন।দিতে থাকেন নানান হুমকি-ধামকি। এমনকি তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন তিনি। পরে পুলিশ এসে তিন গণমাধ্যম কর্মীকে উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক খুশবু হাসান রনি বলেন, রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এখানে আসি।পরে তাদের অভিযোগের সত্যতা পাই।এক পর্যায়ে চিকিৎসকের সহকারীরা আমাদের উপর চড়াও হন।তারা মারমুখি আচরণ সহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এমনকি আমাদের মেরে সেটার ভিডিও করবেন বলে জানান।এছাড়াও তারা ওই চেম্বারের পাশে থাকা একটি স্থানে আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখে পাশে থাকা আরেক ব্যাক্তিকে নির্দেশ দেন দরজা বন্ধ করে দেবার জন্য। পাশাপাশি তারা রোগীদের ভুল বুঝিয়ে মব সৃষ্টির চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ও সহকর্মীরা এসে আমাদের উদ্ধার করে।গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে চিকিৎসক ও তার সহকারীর এমন আচরণ আশা করা যায় না। কি লুকাতে চান তারা। এমন প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের সাথে ঘটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবি করছি। এবিষয়ে আমি কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।
ডিআরবি নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মারুফ বিল্লাহ বলেন, এখানে এসে রোগীদের অভিযোগ শুনে চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার নেবার সময় তিনি ক্ষেপে যান। এক পর্যায়ে তার সহকারীরা মারমুখী আচরণ করেন। রনি ভাইকে ধাক্কা দেন এবং তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। আমরা এমন ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করছি।
নিউজ টুডে ২৪ এর প্রতিবেদক ফেরদৌস জয় বলেন, এমন ঘটনা মেনে নেবার মত নয়। তিনি আমাদের সাক্ষাৎকার দেবার পরেই রেগে যান। আর পাশে থাকা সহকর্মী ও কিছু দালালদের দিয়ে আমাদের হেনস্তা করেন। কালের কন্ঠ ডিজিটালের রংপুর প্রতিনিধি খুশবু হাসান রনিতে মারপিট করেন। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।