ঠাকুরগাঁও সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারে পশুখাদ্য সরবরাহের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ, অবাস্তব ও কঠোর শর্তের ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদার গোষ্ঠীকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে—যা পশুখাদ্যের গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সূত্র জানায়, গত রোববার (২২ জুন) খামারে পশুখাদ্য সরবরাহের একটি টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পান মেসার্স প্রাইম এন্টারপ্রাইজ, যাদের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯ লাখ ৬ হাজার টাকা, যেখানে মূল বরাদ্দ ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই কম মূল্যে পশুখাদ্য সরবরাহ সম্ভব হলেও, স্থানীয় ঠিকাদাররা দাবি করছেন, এতে খাদ্যের গুণগত মান বজায় রাখা অসম্ভব।
টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী স্থানীয় ঠিকাদাররা জানান, ইজিবি পদ্ধতিতে টেন্ডার জমা দেওয়া হলেও, তথাকথিত ‘নমুনা মান অনুপযোগী’ দেখিয়ে তাদের বাতিল করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, বাজারের সেরা নমুনা জমা দিলেও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তার ‘পছন্দ না হওয়ার অজুহাতে নমুনা বাতিল করা হয়, এবং ‘নিম্নদর’ দেখিয়ে সিন্ডিকেটভুক্ত একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়।
মানহীন খাদ্যে উদ্বিগ্ন খামার কর্মকর্তারাও। খোদ মুরগি খামারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব নিম্নমানের খাদ্য খাইয়ে মুরগির কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন কখনোই সম্ভব নয়। এতে খামারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় ঠিকাদাররা সরাসরি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজাহার আহমেদ খানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সেনাবাহিনী ও অধিদফতরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে খাদ্যের মান পরীক্ষার অনুরোধ জানালেও তিনি তাতে সম্মত হননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ইজাহার আহমেদ খান ঢাকা মেইলকে বলেন, গত ২২ জুন খামারে পশুখাদ্য সরবরাহের একটি টেন্ডার করা হয়েছে। যার খাদ্যের মান পরীক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ঢাকায় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পরীক্ষার পর ও পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যাবে খাদ্যের মান সম্পর্কে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত ১৫ বছর ধরে একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত সিন্ডিকেট দেশের বিভিন্ন মুরগি ও হাঁস খামারের পশুখাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সরকার পরিবর্তনের পরেও সেই সিন্ডিকেট এখনও সক্রিয় রয়েছে এবং তারা একই প্রক্রিয়ায় নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করে যাচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও ঠিকাদারদের দাবি—টেন্ডারের অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর শর্তাবলি সংশোধন করে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো ঠাকুরগাঁও সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার ধ্বংসের মুখে পড়বে।
এই খামার ও প্রাণিসম্পদ খাতকে রক্ষা করতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় অংশগ্রহণকারীদের ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য তারা সরকারের কাছে জোরালোভাবে আহ্বান জানিয়েছেন।