বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন

ঠাকুরগাঁওয়ে ফেলে যাওয়া নবজাতকের মায়ের খোঁজ মিলল, দত্তক নিতে মানুষের ভিড়

ডেস্ক নিউজ / ৩৭ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ, ২০২৫

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামের ভুট্টাখেত থেকে একটি নবজাতক কন্যাশিশু উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটির বয়স কয়েক ঘণ্টা। জন্মের পরপরই শিশুটিকে সেখানে ফেলে যাওয়া হয়। এ খবর পেয়ে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত স্বজনহীন শিশুটিকে প্রায় অর্ধশত মানুষ দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

 

এলাকাবাসীরা জানায়, সোমবার দুপুর ১২ টার দিকে পাশের মরিচখেতে কাজ করছিলেন এক নারী। হঠাৎ তিনি কান্নার শব্দ শুনতে পান। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিনি ভুট্টাখেতে সদ্যোজাত শিশুটিকে দেখতে পান। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হন এবং প্রশাসনকে খবর দেন। পরে শিশুটিকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরবর্তীতে ওই শিশুটির মায়ের খোঁজ পাওয়া যায়। সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে স্থানীয়দের বরাতে ওই গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসলাম ঢাকা পোষ্টকে জানান, অনেক খোজাখুজির পর রাতে নবজাতকের মায়ের সন্ধান পাই। শিশুটি ঐ গ্রামের সিরাজ-তমিজান দম্পতির মেয়ে শিল্পী আক্তারের বলে জানা গেছে। তিনি আরও জানান, শিল্পী আক্তারের তিনটি বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কোনো স্বামীর সঙ্গে ঘর সংসার করতে পারেননি। পরবর্তীতে পরকিয়া সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন। এর আগেও একটি সন্তানের জননী হন শিল্পী। কিন্তু সেই সন্তানকেএক ব্যক্তির মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

মোহাম্মদ ইসলাম আরও জানান, রাতে কয়েকশ মানুষের সামনে শিল্পী আক্তার স্বীকার করেছে ভুট্টাখেতে যে শিশুটি পাওয়া গেছে সেটা তার সন্তান এবং তিনি স্বীকার করেছেন কার সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। প্রসবের কয়েক ঘন্টা পর বাড়ির পাশে একটি ভুট্টাখেতে শিশুটিকে ফেলে আসেন তিনি।

শিশুটিকে উদ্ধার করার পর শানু আক্তার জানান, তার পরিবারে কন্যা সন্তান না থাকায় শিশুটি লালন পালনের দায়িত্ব নেবেন। তবে প্রশাসনিকভাবে শিশুটিকে হস্তান্তর করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

এদিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য ৩০-৩৫ জন মানুষ ভিড় করেছেন।

দত্তক নিতে আগ্রহী রাকিব-সুমাইয়া দম্পতি জানান, আমরা নিঃসন্তান। খবর পেলাম ভুট্টাখেত এক নবজাতক পাওয়া গেছে। তাই আমরা হাসপাতালে ছুটে আসি। শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আমরা আবেদন করব।

হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহিন বলেন, শিশুটি সুস্থ রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুটিকে দেখার জন্য মানুষজন ভীড় করছেন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আবুল বাসার জানান, শিশুটি যদিও সুস্থ আছে তবে মাটিতে অনেকক্ষণ থাকায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হবে এ সময়ে কোন নারীর ডেলিভারির তারিখ ছিল। আমরা চেষ্টা করবো শিশুটির মাকে শনাক্ত করার।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খায়রুল ইসলাম ঢাকা পোষ্টকে জানান, সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এইরমধ্যে শিশুটিকে দত্তক নেয়ার জন্য আমাদের সঙ্গে অনেকেই যোগাযোগ করছেন। আমরা শিশুটির পরিচয় শনাক্তে তদন্ত করছি। তবে শিশুটির পরিবারের সন্ধান নাকি পাওয়া গেছে এমন তথ্যও পেয়েছি রাতে। সকালে এবিষয়ে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ