রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের শালাইপুর তেলীপাড়া গ্রামে বসবাসকারী শাহাদৎ হোসেন, যিনি এলাকায় ‘নয়া ফকির’ নামে পরিচিত, নিজেকে ‘জিনের বাদশাহ’ কিংবা ‘তান্ত্রিক কবিরাজ’ দাবি করে গত দুই দশক ধরে সাধারণ মানুষের আস্থা ভাঙা ও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
শাহাদৎ হোসেন লম্বা সাদা দাড়ি ও দরবেশি পোশাকে নিজেকে তাবলিগ জামাতের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন, তার কাছে ৫০ হাজার জিন বন্দি রয়েছে, যাদের মাধ্যমে মানুষের নানা সমস্যা সমাধান করেন। স্বপ্নের মাধ্যমে কবিরাজি শিখে মুরগির রক্ত দিয়ে তাবিজ লেখেন বলেও জানান।
তবে তার এই চিকিৎসা বা অলৌকিক ক্ষমতার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। কথায় কথায় তিনি বলেন, “ঔষধের দোকান করলে তো ঔষধ বিক্রি করতে করতে দোকানিটাই ডাক্তার হয়ে যায়।” যদিও তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জনের কথাও বলেন।
বিশেষত নিঃসন্তান দম্পতিদের উপর তার প্রভাব বিস্তার করে বহু পরিবারকে সর্বস্বান্ত করেছে। দাবি করেন, তার চিকিৎসায় অনেক দম্পতি সন্তান লাভ করেছেন, এমনকি যারা বড় শহরের চিকিৎসায় ব্যর্থ হয়েছেন। ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
প্রতারণার ফলে অর্জিত অর্থে শাহাদৎ হোসেন গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ি। তার ছেলে জাকারিয়া এই কাজে সক্রিয় সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মফিজুল ইসলাম নামের একজন বলেন,
“আমার স্ত্রী দীর্ঘ বছর ধরে সন্তান হচ্ছিল না। শাহাদতের কাছে অনেক টাকা দিয়েছি, কিন্তু কোনো সুফল পাইনি। আমরা সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেছি।”
এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর সে বলেছিল জিন পাঠিয়ে আমার সব সমস্যা সমাধান করবে। আমি তার কথা বিশ্বাস করে নিজের সর্বস্ব দিয়েছি , কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
এক প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, “বছর ধরে সে মানুষকে ঠকাচ্ছে। অনেকেই মুখ খুলতে ভয় পায়, কারণ সে প্রভাবশালী।”
মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, “যে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এলে আমরা তদন্ত করব। প্রমাণ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেব।”