জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানো ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে মর্যাদাপূর্ণ স্থান অক্ষুণ্ন রেখে আসছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম স্থানে ছিল। তার আগেও কখনো প্রথম, কখনো দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের বহু গৌরবময় অধ্যায়ের অংশ বাংলাদশের শান্তিরক্ষীরা।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল নেপাল। এ সময় মিশনে নেপালের মোট শান্তিরক্ষী ছিল ৬০১ নারীসহ পাঁচ হাজার ৩৫০ জন। বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪৭ জন নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩০ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে তৃতীয়। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ছিল ৬৬০ জন নারীসহ পাঁচ হাজার ২৩৭ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে রুয়ান্ডা।
ভারতের অবস্থান ছিল ১৫১ জন নারীসহ পাঁচ হাজার ২২৪ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে চতুর্থ এবং পাকিস্তানের অবস্থান ছিল ১৫১ জন নারীসহ দুই হাজার ৬৫৮ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে পঞ্চম। সর্বোচ্চসংখ্যক শান্তিরক্ষী পাঠানো ১০টি দেশের মধ্যে নেপাল, রুয়ান্ড, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের পরের অবস্থান যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, চীন, মরক্কো ও তানজানিয়ার। দেশের জন্য এই সম্মানজনক অবস্থানে থাকার মধ্য দিয়ে আজ ২৯ মে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব বাণী দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশ নেওয়া শুরু। এরপর ৩৭ বছরে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের এক গর্বিত অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী এই মিশনে দায়িত্ব পালন করছে ১৯৯৩ সাল থেকে। বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা এ মিশনে অংশ নিচ্ছেন ১৯৮৯ সাল থেকে। ওই বছর নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয়।
২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি যুদ্ধজাহাজ ওসমান ও মধুমতী লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘সংগ্রাম’ ভূমধ্যসাগরে মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অংশ হিসেবে লেবাননে অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের অনুপ্রবেশ রোধ, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজ উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনাল কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সমন্বয়ে গঠিত একটি নৌ কন্টিনজেন্ট ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ফোর্স মেরিট ইউনিট হিসেবে দক্ষিণ সুদানে মোতায়েন রয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর তিনটি স্বতন্ত্র কন্টিনজেন্ট জাতিসংঘের দুটি অঞ্চলে নিয়োজিত আছে। এর মধ্যে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে (ডিআর কঙ্গো) ছয়টি এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারসহ একটি ইউটিলিটি এভিয়েশন ইউনিট এবং সি-১৩০ পরিবহন বিমানসহ একটি এয়ার ট্রান্সপোর্ট ইউনিট এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তিনটি এমআই সিরিজ হেলিকপ্টারসহ একটি বাংলাদেশ আর্মড মিলিটারি ইউটিলিটি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্র জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এ পর্যন্ত পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ জন সদস্য তাঁদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা এক হাজার ৯২৭ জন। বর্তমানে ৭১ জন নারীসহ মোট ১৯৯ জন পুলিশ সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
সেনাবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১৩১ জন, নৌবাহিনীর চারজন, বিমানবাহিনীর ছয়জন এবং পুলিশের ২৪ জন। আহত হয়েছেন ২৭২ জন। এই বছর দুজন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে।