সরকারি বরাদ্দের ঘুষ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার এক শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে সাদা কাগজে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) কিশোরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগটি করেন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের জান্নাতুল বানাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষক শোয়াইব ইসলাম মিজান।
অভিযোগে বলা হয়, উপজেলার পিয়ন লিটন ইসলাম শিক্ষক শোয়াইবকে ভুয়া মাদরাসার মাধ্যমে সরকারি বরাদ্দ পাওয়ার প্রস্তাব দেন এবং ৭০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরে তার ভুয়া মাদরাসায় তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু চাল না দিয়ে কেবল ঘুষের টাকা ফেরত দেন লিটন ইসলাম। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত সোমবার উপজেলা পিআইও লতিফুর রহমান, পিয়ন লিটন ইসলামসহ আরও দুজন একটি মাইক্রোবাসে করে মাদরাসায় যান। অভিযোগে বলা হয়, তারা শিক্ষককে বরাদ্দ না দেওয়ার হুমকি দিয়ে ‘লিটন কোনো ঘুষ নেননি’-এমন একটি সাদা কাগজে জোর করে লিখিয়ে নেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষক শোয়াইব ইসলাম মিজান বলেন, লিটন ইসলাম আমাকে ভুয়া মাদরাসার মাধ্যমে বরাদ্দ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমি তাতে রাজি হইনি। কিন্তু পরে আমার মাদরাসায় তিন মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আসে। চাল না দিয়ে শুধু ঘুষের টাকা ৭০ হাজার ফেরত দেন। আমি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে বলি। সাংবাদিকরা সংবাদ প্রচার করলে পিআইও অফিস থেকে লোকজন মাদরাসায় এসে আমাকে চাপ দেয়।
শোয়াইব ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরে উপজেলা পিআইও লতিফুর রহমান, অফিস সহকারী লিটন ইসলাম ও আরও দুজন একটি মাইক্রোবাসে করে তার মাদরাসায় আসেন। সেখানে তাকে বরাদ্দ না দেওয়ার হুমকি দিয়ে সাদা কাগজে লিখিয়ে নেন ‘লিটন কোনো ঘুষ নেননি।’ তিনি বলেন, তারা মোবাইল ধরতেও দেয়নি। আমি তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বেশ কয়েকটি মাদরাসা ও এতিমখানার নামে টিআর-কাবিখা প্রকল্পের চাল বরাদ্দ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিস সহকারীর মাধ্যমে ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে আবেদন গ্রহণ করা হয় না, বরাদ্দ আটকে রাখা হয়-এমন অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে পিআইও লতিফুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রতীম সাহা বলেন, একজন পিয়নের আসলে বরাদ্দের আবেদন নেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আবেদন সরাসরি জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া উচিত, অথবা কেউ চাইলে আমার (ইউএনও) মাধ্যমেও পাঠাতে পারেন। এখন যদি কেউ পিয়নের মাধ্যমে আবেদন করে থাকেন, তাহলে সেখানেও নিশ্চয়ই কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল।
কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।