অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। একের পর এক ষড়যন্ত্র, অপতৎপরতা আর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নানা পরিকল্পনা—সবই ছিল নতুন সরকারকে ব্যর্থ করার কৌশলের অংশ। এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর এবার ঢাকাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আওয়ামী লীগ। নিরাপত্তা সূত্রের দাবি, রাজধানী দখলের পরিকল্পনায় মাঠে নামানো হয়েছে প্রশিক্ষিত একটি ‘গেরিলা টিম’।
দেশ–বিদেশে প্রশিক্ষণ
সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে তালিকাভুক্ত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে—দেশে এবং দেশের বাইরে। দিল্লি, কলকাতা, গোপালগঞ্জ, রাজধানী ঢাকাসহ একাধিক স্থানে এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। কোর গ্রুপের বড় একটি অংশ ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করেছে।
অবাক করার মতো বিষয় হলো—প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, যারা এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একাধিক সাবেক নেতাকর্মীও এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
কনভেনশন হলে ৪০০ জনের প্রশিক্ষণ
৮ জুলাই রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে প্রায় ৪০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেসময় সরকারবিরোধী নানা স্লোগানও শোনা যায়। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ১৩ জুলাই রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে গ্রেফতার হন দুজন—সোহেল রানা (৪৮) ও শামীমা নাসরিন শম্পা (৪৬)।
সোহেল রানা বরগুনার তালতলী উপজেলার মৌপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, বর্তমানে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে বসবাস করছেন। শম্পার স্বামী আহাদুজ্জামান অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; তার শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে, বাবার বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়।
লক্ষ্য: শাহবাগ দখল, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী, শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলেই তালিকাভুক্ত নেতাকর্মীরা সারা দেশ থেকে ঢাকায় সমবেত হবেন। মূল লক্ষ্য—শাহবাগ মোড় দখল করা। এরপর প্রচার চালানো হবে যে, আওয়ামী লীগের লাখো কর্মী রাজধানী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং প্রশাসনও তাদের সঙ্গে রয়েছে।
এর প্রভাব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তাদের ধারণা। আওয়ামী অধ্যুষিত জেলাগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়বে। সংঘাত বাড়লে পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে—এমনটাই ছিল পরিকল্পনার অংশ।
ডিবির বক্তব্য
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) কামরুল হাসান বলেন, “এটি বড় আকারের পরিকল্পনা। তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। একাধিক সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে।”
সরকারের কৌশল ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য
সরকার বিষয়টি জানার পর জড়িতদের গ্রেফতার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে—বিশেষ টিম গঠন, জড়িতদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ না দেওয়া এবং পুরো চক্র ধরা না পড়া পর্যন্ত বিষয়টি গোপন রাখা।
বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “দেশে কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই, নিরাপত্তা নিয়েও কোনো হুমকি নেই। সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” তিনি আরও জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে।