শিরোনাম
নিষিদ্ধ না করে নির্বাচন হলে জাতীয় পার্টি রূপে ফিরবে আ.লীগ: রাশেদ খাঁন সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ সৈয়দপুরে জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত। এনসিপিতে চাঁদাবাজ, তেলবাজ ও সেলফিবাজ নেতাদের ঠাঁই হবে না: হাসনাত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরতে চায় বিএনপি-জামায়াত ‘ছাত্রলীগ কর্মী’ থেকে সরাসরি ছাত্রদলের সেক্রেটারি পদে, প্রতিবাদ জানিয়ে অব্যহতি নিলেন ৪ জন চাঁদা না পেয়ে মাছ লুট: উপজেলা বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে তদন্তে জেলা বিএনপি জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে রংপুরে সহস্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সেনাবাহিনী। গণঅধিকার পরিষদের রংপুর মহানগর শাখার আহব্বায়ক কমিটি গঠন: আহব্বায়ক সৈয়দ গাফফারুল ইসলাম, সদস্য সচিব মো.ইয়াছিন আলি সমন্বয়কদের চাঁদাবাজির খবরে বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছি: মির্জা ফখরুল চাঁদাবাজির বিপক্ষে পোস্ট দেয়ায় বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীর ওপর এনসিপির হামলা
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৯ অপরাহ্ন

গঙ্গাচড়ায় হামলার শিকার পরিবারগুলো আতঙ্কে, সরিয়ে নিচ্ছেন বাড়ির মালামাল

স্থানীয় রিপোর্ট / ২২ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার এক কিশোরের বাড়িসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ১৪টি বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুরের পর পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আজ সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হামলার শিকার পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড। আতঙ্কে পরিবারগুলো গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ও অন্য মালামাল ভ্যানে করে সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে গরু, ছাগল ও ধান বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও ভেতরে অবস্থান করছে সেনাবাহিনী। কাছাকাছি খিলালগঞ্জ বাজারেও পুলিশ ও সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে।

গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান গতকাল বলেন, ওই কিশোর ফেসবুকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে অবমাননাকর লেখা ও ছবি দিয়েছেন, এমন অভিযোগ পায় পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে আটক করে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে থানায় আনা হয়। পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে সম্মিলিত শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত আটটার দিকে কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর তার বিচারের দাবিতে উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে তার বাড়ির সামনে যায়। রাত ১০টার দিকে দ্বিতীয় আরেকটি মিছিল এসে তার এক স্বজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, গতকাল রোববার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আবারও উত্তেজিত জনতা কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালায়। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয় এবং এতে পুলিশের এক কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

কথা হয় কমলাকান্ত রায় নামের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁরা সারা রাত ঘুমাননি। সকাল থেকে বাড়ির মালপত্র সরাচ্ছেন। ১০-১২ মণ ধান ছিল। সেগুলো বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন। কমলাকান্তের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা দুজন নারী জানান, তারাগঞ্জ থেকে তারা স্বজনদের দেখতে এসেছেন। তবে নাম প্রকাশ করতে চাননি। একজন বলেন, ‘ওরা না খেয়ে আছে। ভাত খাওয়ানোর কথা বললে বলে, ভেতরে ভাত যাইব না।’

হামলার শিকার পরিবারগুলো বলছে, বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি তাদের মালামাল লুট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ রায় নামের একজন বলেন, তাঁর স্ত্রীর এক ভরি স্বর্ণ কাপড়-চোপড় ও জমির কাগজপত্র লুট হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে কথা হয় তাঁর স্ত্রী রোহেলা রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যদি আবার আগুন দেয়, তবে আর কিছু থাকবে না। কাঁথা-বালিশ, তোশক—সব তাঁর ভাই নিয়ে গেছে। হরিশচন্দ্র বলেন, এখানে তাঁর শ্বশুরবাড়ি। শ্বশুরবাড়িতে গরু-ছাগল পালন করা হতো। এখন গন্ডগোলের কারণে চন্দনপাটে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

আলদাদপুর নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলদাদপুর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের আশপাশেই এসব হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী দেখা যায়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কালী রঞ্জন রায় বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন ধর্মাবলম্বী। গতকাল ছুটি দেওয়া হয়েছে, আজ কেউ আসেনি। অনেকে পরিবারসহ বাইরে অবস্থান করছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায় বলেন, আজ দুপুরের পর আবার মিছিল নিয়ে আসার হুমকি এসেছে। আতঙ্কে অনেকে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, গতকালের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটকও করা হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘গতকাল রাতে জেলা পুলিশ সুপার আবু সাইম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গতকালের হামলার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের মাগুরা ইউনিয়নের লোকজন সম্পৃক্ত বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আজকে গঙ্গাচড়ার খিলালগঞ্জ বাজারে মোতায়েন আছে যাতে তারা আবারও ঢুকতে না পারে। ১৫টি বাড়ির ক্ষতি বা লুটপাটের আমরা একটা তালিকা করেছি, তাঁদের আর্থিক বা অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ