তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ মোঘল আমলের অনন্য নিদর্শন কিশোরগঞ্জ উপজেলার উত্তর ভেরভেরী গ্রামের চাঁদ খোসালের মসজিদ। মোঘল আমলে নির্মিত চিটাগুড়, চুন-সুরকি ও পোড়ামাটিতে করা মসজিদটি কারুকাজে সমৃদ্ধ। ফুল, লতা-পাতার নকশা ও আরবী লেখায় ভরা মসজিদের দরজা ও সামন অংশে। ভুমিকম্পের সময় সামান্য একটু ক্ষতি হলেও স্থাপত্য শৈলীতে ভাটা পরেনি। মসজিদটি রাতারাতি হওয়ার জনশ্রুতি থাকায় লোকজন মনোবাসনা পূরণে মানত করেন। এখন মানত ও দানের টাকায় মসজিদের তহবিল ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কথিত আছে, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ভেড়ভেড়ি গ্রামের জমিদার সূর্য আলহাজ্ব চৌধুরীর চাঁদ এবং খোসাল চৌধুরী নামে দুই ছেলে ছিলেন। চাঁদ চৌধুরী এবং খোসাল চৌধুরী দুই ভাই মিলে মসজিদটি তৈরী করেন। তখন থেকে মসজিদটির নামকরণ হয় চাঁদ খোসাল মসজিদ।
মসজিদটির দৈর্ঘ ৪০ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট এবং উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। এর মিনার নেই। তবে মোঘল আমলের ধাঁচে তিনটি বড় গম্বুজ দীপ্তমান। সম্প্রতি মার্বেল পাথর দিয়ে এ শ্রীবৃদ্ধি করা হয়েছে। ৪২ ইঞ্চির দেয়াল করা হয়েছে চিটাগুড়, চুন-সুরকি ও এটেল মাটি দিয়ে। ঐতিহাসিক মসজিদটির মেহরাবের দু’পাশে রয়েছে দুটি ছিদ্র। কথিত আছে, একসময় ভুমিকম্পের পরে সংস্কার কাজে মিস্ত্রিরা গর্ত দুটি বন্ধ করে দেয়ায় দুইজন শ্রমিক মারা যান বলে মসজিদটির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মজনুর রহমান জানান। সাথেই গর্ত দুটি খুলে দেয়া হয়। ১৩ শতক জমির উপর মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া পুকুরে আরো ১৪ শতক জমি মসজিদের দখলে আছে।
চাঁদ খোসাল মসজিদের খতিব রেজাউল করিম রিফাত বলেন, শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে আসেন। মসজিদে স্থান সংকুলান না হলে রাস্তায় জায়নামাজ বিছিয়ে দেয়া হয়। মুসল্লি ইব্রাহিম আলী বলেন, মসজিদটি আকারে ছোট হওয়ায় ২০১০ সালে কাঠামো বাড়ানো হয়। কোষাধ্যক্ষ মজনুর রহমান জানান, ধর্মপ্রান মুসলমান; এমন কি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গরু,ছাগল, কবুতর, মুরগী ও আবাদী শষ্য দান ও মানত করে। এতে মোটা অংকের টাকা জমা হয়। ঈমাম ,মুয়াজ্জিন ও খাদেমের বেতন ও সংস্কার খরচ বাদ দিয়ে বর্তমান মসজিদের তহবিল ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মজনুর রহমান আরো বলেন, এক সময় মসজিদের ফান্ডে কোন টাকা থাকত না। পরে কমিটি নিয়ে গ্রামবাসীর টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হলে, তৎকালিন কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিদ্দিকুর রহমান ঢেলে সাজিয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫ সালে কমিটি গঠন করেন। তখন থেকে মসজিদের তহবিল বৃদ্ধি হতে থাকে। ঈদুল আজহার আগে গত ১২ মে’২০২৫ তারিখে মসজিদের দানবাক্স খুলে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এই দান বাক্সটি ৬ মাস পর খোলা হয়।
চাঁদ খোসাল মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আশরাফুল ইসলাম বলেন, মসজিদটির উন্নয়ন কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে।