শিরোনাম
হাকিমপুর থানায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে শিক্ষক পরিবারের সন্তান ও সাংবাদিকের ছেলে রক্তিম আত্মহত্যায় মারা যাওয়া বেরোবি ছাত্রী টুম্পার ‘সুইসাইড নোট’ থেকে মিলেছে চারজনের নাম আগামীর আন্দোলন দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে: নাহিদ ইসলাম পাথর মেরে হত্যার ঘটনায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ২ মোদিকে উপহার হিসেবে রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙা আম পাঠাচ্ছেন ড. ইউনূস সাফ অ-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশীপে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ছোট বাঘিনীরা জামায়াতের সঙ্গে জোট নয়, এনসিপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা উন্মুক্ত : সালাহউদ্দিন রংপুরের গঙ্গাচড়ায় অবসরজনিত ৮ শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গণধর্ষণের শিকার হয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা,থানায় মামলা দায়ের খুলনায় নাহিদ-হাসনাত-সারজিসদের সফর, তড়িঘড়ি করে সড়ক সংস্কারে ব্যস্ত সড়ক বিভাগ
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫২ অপরাহ্ন

এসএসসিতে ৩.৩৮ পাওয়া আল-আমিন এখন বিসিএস ক্যাডার

ডেস্ক রিপোর্ট / ২১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফল। এবারের ফলাফলে দেখা গেছে, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অনেক শিক্ষার্থী খুব কাছে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করতে পারেনি, ফলে হতাশা কাজ করছে অনেকের মধ্যেই। তবে, জিপিএ-৫ না পেলেও জীবনে সফল হওয়া সম্ভব—এমনই এক অনুপ্রেরণাদায়ী উদাহরণ হয়ে উঠেছেন বিসিএস ক্যাডার শাকিল আল-আমিন।

২০০৬ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৩.৩৮ অর্জন করেন শাকিল। যদিও এ ফলাফলটি অনেকের কাছে হতাশাজনক মনে হতে পারে। তবে সেসময় তার গ্রামে এই ফলাফলই ছিল সেরা। পরিবারের আর্থিক সংকটের মধ্যেও তিনি থেমে যাননি। আত্মীয়ের এনজিওতে চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে বেছে নেন উচ্চশিক্ষার পথ।

ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন নেত্রকোণা সরকারি কলেজে। থাকার জায়গার অভাবে লজিং বাড়িতে উঠেন এবং বিনিময়ে শুরু করেন ছাত্র পড়ানো। হারিকেনের আলোয় রাত জেগে পড়াশোনা চালিয়ে যান। বাবা একটি ছোট গরু বিক্রি করে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংয়ে পাঠান। তারপরই ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি তার লক্ষ্যপানে।

এইচএসসিতে তিনি জিপিএ ৪.১০ অর্জন করেন। এ ফলাফলে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে চান্স পেয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়বেন তাই ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সফলভাবে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে নিজের চেষ্টায় কঠোর পরিশ্রম করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ৩৬তম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন শিক্ষা ক্যাডার পদে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ নগরীর ঐতিহ্যবাহী আনন্দ মোহন কলেজে কর্মরত রয়েছেন।

গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাকিল আল-আমিন তার এই সাফল্যের গল্প তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘এসএসসিতে ৩.৩৮ পাওয়ার পর আমি কখনোই আপসেট হইনি। আমার বন্ধুদের ৫০ শতাংশই A কিংবা A+ পাওয়া। হারিকেনের নিভু নিভু আলোয় ভোর ৪টায় উঠে পড়তে শুরু করলাম দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠে। আমি নিশ্চিন্ত ছিলাম—তিনবেলা ভাত, একটু মাথা গুজার ঠাঁই আর হারিকেনের কেরোসিন পাচ্ছি। এই সাপোর্ট ছিলো আমার জন্য তীব্র অনুপ্রেরণাদায়ক।’

তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের স্যার ও সহপাঠীদের মুখে শুনতাম ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথায় কুট কুট করত পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার বায়না। তখন বুঝেছি স্বপ্ন সেটা নয় যা ঘুমিয়ে দেখি, স্বপ্ন সেটাই যা আমাকে ঘুমাতে দেয় না।’

নিজের অধ্যবসায়ের কথা জানিয়ে আল-আমিন বলেন, ‘দৈনিক অন্তত ১২-১৪ ঘণ্টা পড়তাম। লজিং বাড়ির লোকজন বলতো, তুমি অসুস্থ হয়ে যাবা। আমি বাড়ি যাওয়া বন্ধ করলাম। শেষ পর্যন্ত এইচএসসিতে ৪.১০ পেলাম। তখনই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সুযোগ মিললো।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পরামর্শ দিয়ে শাকিল বলেন, ‘আমার পাশে মহাত্রাণকর্তা হিসেবে দাঁড়ালেন আমার বাবা। একটা ছোট গরু বিক্রি করে পাঠালেন ময়মনসিংহে। ভর্তি কোচিং ও থাকা-খাওয়ার দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে শুধু পড়াশোনায় মন দিলাম। আমি ছোটবেলায় ডাক্তার লুৎফর রহমানের বই পড়ে জেনেছিলাম, পরিশ্রম দিয়ে মানুষ তার যেকোনো স্বপ্ন জয় করতে পারে। আমি বড় হয়ে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে শিখি, ‘পরিশ্রম কখনো পরিশ্রমীকে বিনা পারিশ্রমিকে বিদায় করে না।’

শাকিল আরও বলেন, ‘থমাস কার্লাইল বলেছিলেন, সব অনিশ্চয়তা, হতাশা আর বাধা সত্ত্বেও নিজের সবটুকু দিয়ে সফল হওয়ার চেষ্টাই শক্তিমান মানুষকে দুর্বলদের থেকে আলাদা করে। আমি মনে করি, মানুষ তার স্বপ্ন ও চেষ্টার সমান বড়ো। তাই হতাশ না হয়ে নিজেকে আবিষ্কার করো। নিজের শক্তিকে মানসিক দাসত্বের শৃঙ্খলে বেঁধে রেখো না। ঘুরে দাঁড়াও।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ