একই রকম চেহারা, একই স্কুল, একই শ্রেণি, এমনকি একই ফলাফল—সবকিছুতেই যেন একে অপরের ছায়া। শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের মধ্য চররোসুন্দী গ্রামের যমজ দুই ভাই জিহাদ হাসান ও বায়জিদ হাসান এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একেবারে অভিন্ন ফলাফল অর্জন করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন।
জন্মের সময় দুই ভাইয়ের মধ্যে ছিল মাত্র এক মিনিটের ব্যবধান। কিন্তু লেখাপড়া, স্বপ্ন আর সাফল্যে তারা যেন একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
বুধবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলে দেখা যায়—দুজনই জিপিএ ৪.৭৮ পেয়ে পাস করেছে। শুধু তাই নয়, আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিটি বিষয়েই তাদের প্রাপ্ত নম্বর এক।
সুবচনি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে তারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বছর ওই স্কুল থেকে মোট ৪৮ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে ২৮ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। জিহাদ ও বায়জিদ তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করে স্কুলের মুখ উজ্জ্বল করেছে।
পরীক্ষায় তারা ছয়টি বিষয়ে (ইংরেজি, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) পেয়েছে এ প্লাস। বাংলা ও রসায়নে পেয়েছে এ গ্রেড এবং গণিত ও উচ্চতর গণিতে পেয়েছে এ মাইনাস। অল্পের জন্য গোল্ডেন জিপিএ-৫ মিস করায় একটু হতাশ হলেও তারা দুই ভাই একই কণ্ঠে বলেছে, আমরা খুশি, কারণ আমাদের ফলাফল এক হয়েছে, যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দ।
দুই ভাইয়ের স্বপ্ন—একসঙ্গে মেরিন অফিসার হওয়া। তবে কৃষক বাবা সাইদুর রহমান ও গৃহিণী মা জুলেখা বেগমের আর্থিক সামর্থ্য সীমিত। তাই সন্তানের স্বপ্নপূরণে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক সংকট।
বায়জিদ হাসান বলেন, আমরা সবসময় একসঙ্গে পড়েছি, একসঙ্গে বড় হয়েছি। এখন আমরা চাই একসঙ্গে সামুদ্রিক জগতে এগিয়ে যেতে।
জিহাদ হাসান যোগ করেন, আমরা সবার কাছে দোয়া চাই, যেন আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয় এবং আমরা বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।
দুই সন্তানের এমন সাফল্যে গর্বিত মা-বাবাও সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
সুবচনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দীন সিকদার বলেন, দুই ভাইয়ের প্রতিটি বিষয়ে অভিন্ন নম্বর পাওয়া সত্যিই বিরল ঘটনা। তারা আমাদের স্কুলের গর্ব।