মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

এনসিপির পরিচিতি সভায় ‘জুলাই আন্দোলন’ বিরোধী আ.লীগ নেতা

স্থানীয় রিপোর্ট / ১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় অনুষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক পরিচিতি সভায় ‘জুলাই আন্দোলন’ বিরোধী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে অতিথির আসনে বসানো নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলার বিজয় চত্বরে আয়োজিত এনসিপির এই পরিচিতি সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সুধীজনদের পাশাপাশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

জাহাঙ্গীর আলম সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের ভাগ্নে। তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী রবিউল ইসলাম লিথনের নির্বাচনী সভায় হামলা ও হয়রানির ঘটনাও স্থানীয়ভাবে আলোচিত।

২০২৩ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর এবং বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা ও ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার অভিযোগও রয়েছে। একইভাবে ২০২৪ সালে তার নেতৃত্বে ডিমলা উপজেলায় ‘জুলাই আন্দোলন’-এর সময় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ভোটে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় তিনি একাধিক মামলার আসামিও।

খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বলেন, “আমাকে তারা সরকারি যন্ত্র, বিশেষ করে পুলিং ও প্রিজাইডিং অফিসারদের ব্যবহার করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে হারিয়েছিল। যেভাবে দিনের ভোট রাতে নিয়ে সরকার গঠন করা হয়েছিল, ঠিক একই কৌশলে ২০২৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কারচুপি করে বর্তমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।”

‘জুলাই আন্দোলন’ স্মৃতি জড়িত রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরের উপস্থিতিকে অনেকে দেখছেন এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ব্যক্তি আমাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তার উপস্থিতি আমাদের আদর্শিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা এনসিপির কমিটিতে না থাকলেও ওই সভায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তিনি অতিথির আসনে বসা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এভাবে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসিত করে, তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধ থাকব।”

এনসিপির নীলফামারী জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, “জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও ২০২৩ সালে তিনি দলটির সব পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের ৪ আগস্টের আন্দোলনে তিনি বিরোধিতা করেছিলেন কি না, সেটা আমি নিশ্চিত না। আমি শুনেছি, তিনি নাকি আন্দোলনে সহযোগিতাও করেছিলেন। সে কারণেই তাকে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছে।”

তবে জাহাঙ্গীর আলম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন বা বিরোধিতা করেছেন কিনা, তা নিয়েও রয়েছে বিভ্রান্তি। আন্দোলনকালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর তার দ্বারা চালানো পুলিশি হয়রানির কথাও বিভিন্ন সূত্রে উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার প্রতিক্রিয়া নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। কেউ কেউ লিখেছেন, “যারা অতীতে বাধা দিয়েছে, তারাই আজ বিকল্প রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে। এটা রাজনৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।” অন্য এক নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, “ফ্যাসিস্টদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মানে হলো আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের রক্তের প্রতি অবমাননা।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ