রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সায়মার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন এক নিমিষেই ধুলোয় মিশে গেলো। গতকালের এই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু একটি জীবনই কেড়ে নেয়নি, কেড়ে নিয়েছে একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ এবং একঝাঁক রঙিন স্বপ্ন।
সায়মার অকাল মৃত্যুতে তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের উত্তর বিপ্রবর্ণা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। “আমার মেয়েটা ডাক্তার হতে চেয়েছিল। আমরা ওকে আদর করে ‘ডাক্তার সায়মা’ বলেই ডাকতাম,” অশ্রুসজল চোখে এভাবেই নিজের মেয়ের স্বপ্নের কথা বলছিলেন নিহত সায়মার বাবা শাহ আলম। তার কণ্ঠ জুড়ে কেবলই হাহাকার আর বুকফাটা আর্তনাদ।
গতকাল সোমবার (২১শে জুলাই) দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুলের ওপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে বহু শিক্ষার্থীর সাথে প্রাণ হারায় ছোট্ট সায়মা। দুর্ঘটনার পর থেকেই তার পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে পাগলের মতো খুঁজে বেড়ান তাকে। অবশেষে রাতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে শনাক্ত হয় সায়মার নিথর দেহ।
রাতে যখন সায়মার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। স্বজনদের আহাজারি আর কান্নার রোলে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের আকাশ-বাতাস। আকস্মিক এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার, শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম। দুই ভাই-বোনের মধ্যে ছোট সায়মা দাদা-বাড়ির একমাত্র আদরের মেয়ে হওয়ায় তাকে ঘিরে সবার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া।
সায়মার দুই চাচা জানান, দুপুরে স্কুল ভবনে দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই তারা সায়মাকে খুঁজতে শুরু করেন। শহরের সবগুলো বড় হাসপাতালে খুঁজে অবশেষে সিএমএইচে এসে পান তাদের আদরের ভাতিজির নিথর দেহ।
বড় ভাই সাব্বিরের কাছে সায়মা ছিল আদরের ছোট বোন। বোনের মৃত্যুতে সে এখন পাথর। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আর বোনের স্মৃতি তাকে নির্বাক করে দিয়েছে।
এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও দুঃখের জন্ম দিয়েছে। তারা অবিলম্বে নিহত বাকিদের মরদেহ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে, দিয়াবাড়ির মতো ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা যেন বিমান প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার না করা হয়, সেই দাবিও তুলেছেন তারা।
আজ বেলা ১১টায় জানাজা শেষে সায়মাকে বাড়ির পাশের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।