রংপুরের গঙ্গাচড়ার আলদাদপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন রংপুরের দুই সংবাদকর্মী। বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ৩টার দিকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলামের গালাগাল ও গ্রেপ্তারের হুমকির মুখে পড়েন দৈনিক কালবেলার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি এবং প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান।
দুই সাংবাদিক জানান, রোববার গঙ্গাচড়ার পাশের কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নসংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করে সিঙ্গেরগাড়ি বাংলাবাজারে হাজারো মানুষকে জমায়েত করা হয়। পরে সেখানে উত্তেজিত জনতা হিন্দুপল্লিতে হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ঘটনাস্থলের আশপাশে কিশোরগঞ্জ থানা থেকে ৪-৫ জন পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ওসির বক্তব্য নিতে গেলে শুরু হয় অপ্রীতিকর ঘটনা। থানার সামনে গোলঘরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনে ওসি আশরাফুল ইসলাম প্রথমে ঘটনাটি অস্বীকার করেন এবং পরে রূঢ় ভাষায় জবাব দেন। ওই দুই সাংবাদিক অভিযোগ করেন, একপর্যায়ে ওসি বলেন, ‘উসকানি দিতে আসছে ওরা। উসকানি দিচ্ছেন আপনারা। মিয়া সব খবর আছে আপনাদের উসকানি দেওয়ার। আপনাদের যোগ্যতা থাকলে ভালো জায়গায় কিছু করতেন। এভাবে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করতেন না।’
ওসি এ সময় সাংবাদিক রেজওয়ান রনিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘চোখ দিয়ে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?’ অন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরেন তো এদের।’
পাশে থাকা এসআই মহসিন বিষয়টি ঠান্ডা করার চেষ্টা করলে ওসি তাঁকে নির্দেশ দেন, ‘এই পুলিশ ডাকেন, ওদের ধরেন। প্ল্যান করছে দুজনে, প্রমাণ আছে আমার কাছে।’
এসআই মহসিন পরে দুই সাংবাদিককে থানা থেকে নিরাপদে বের করে নিয়ে যান। তখনো ওসি গালাগাল করতে থাকেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিকের।
ঘটনার বিষয়ে নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন শেখ ওসির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি আধুনিক পুলিশ, সাংবাদিকদের ভয় করে চলি না। এসপি, ডিআইজি কিংবা আইজির কাছে অভিযোগ করে যদি আমার চাকরি যায়, তাহলে সে চাকরি করব না। দুষ্কৃতকারীর স্থান আমার কাছে নেই, সাংবাদিক হোক, পুলিশ অফিসার হোক আর রাজনীতিবিদ হোক। যদি ফাইজলামো করে, পিটিয়ে সোজা করে দেব একেবারে।’
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের (আরপিইউজে) সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু সাংবাদিক লাঞ্ছনা নয়, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার শামিল। দায়িত্বরত সাংবাদিকদের অপমান ও গ্রেপ্তারের হুমকি ফ্যাসিস্ট আচরণের উদাহরণ। জড়িত ওসিকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় শাস্তির আওতায় না আনলে সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনে নামবে।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ওসি মো. আশরাফুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।