বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

আবু সাঈদের ১ম শাহাদাতবার্ষিকীতে অপরাধীদের দ্রুত বিচার চাইলেন বাবা

স্থানীয় রিপোর্ট / ১১ বার এই সংবাদটি পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

গাছগাছালিতে ঘেরা ছায়ানিবিড় গ্রাম বাবনপুর। রাস্তার দুই পাশে ইটের আধা পাকা বাড়ি। আছে মাটির ঘরও। এই গ্রামের সন্তান আবু সাঈদও থাকতেন একটি মাটির ঘরে। বাবনপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা আবু সাঈদ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম শহীদ।

গত বছরের এই দিনে (১৬ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দেন আবু সাঈদ। তাঁর মৃত্যুর পর আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যা শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন ও মনোয়ারা বেগমের ছেলে আবু সাঈদ পড়তেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে। তাঁরা ৯ ভাইবোন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ১০ আগস্ট আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করতে বাবনপুর গ্রামে আসেন অধ্যাপক ইউনূস। দেশের মানুষের কাছে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ঠিকানা এখন বাবনপুর। স্থানীয় ইউপি সদস্য সুলতান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আবু সাঈদের বীরোচিত আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। গ্রামের মানুষ তাঁর বীরত্বের জন্য গর্বিত।

গ্রামীণ রাস্তার পাশে আবু সাঈদের কবর। কবরের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা, জুলাই ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম বীর ও প্রথম শহীদ আবু সাঈদের সমাধিস্থল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টিমুখর দিনে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, বাবা মকবুল হোসেন ছেলের কবরের পাশে রাস্তা পরিষ্কার করছেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের আসার কথা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন কবরস্থানের সংস্কারকাজ করছে। রংপুরের মেসে আবু সাঈদের ব্যবহার করা চেয়ার, টেবিল এ প্রতিবেদককে দেখালেন তিনি।

মকবুল হোসেন জানান, অভাবী সংসারে আবু সাঈদ খুব কষ্ট করেছেন। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ১৬তম হয়েছিলেন। কিন্তু দূরে হওয়ার কারণে ভর্তি হননি।

আবু সাঈদের আত্মত্যাগে গর্ববোধ করেন বাবা মকবুল হোসেন। বললেন, ‘ছেলেটা অনার্স পাস করেছে। চাকরি হাতে আইসে আইসে অবস্থা। তাতে আন্দোলনে যোগ দিছিল। মনে হয়, ওরে অসিলা (উপলক্ষ) করে আল্লাহ ওই স্বৈরাচারোক পতন করছে। আল্লাহ করেছে, এটা কিন্তু মানুষ করে নাই। যারা নির্যাতিত ছিল, জেলহাজতে, আয়নাঘরে ছিল, তারা কি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে নাই। অবশ্যই করেছে। এই ফরিয়াদটা আমার ছেলের অসিলায় আল্লাহ কবুল করেছে।’

আবু সাঈদের মৃত্যুর রাতে লাশ দাফনের সময় প্রশাসনের চাপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মকবুল হোসেন। বলেন, ওই দিন ইউএনও, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁর বাড়িতে এসে রাতেই লাশ দাফনের জন্য চাপ দেন। কিন্তু আত্মীয়স্বজনেরা জানাজার জন্য সকাল নয়টায় সময় দিয়ে মাইকিং করলে তখনকার ইউএনও ভীষণ ক্ষুব্ধ হন।

আবু সাঈদ জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ উল্লেখ করে বাবা মকবুল হোসেন বলেন, চারজন অপরাধী কারাগারে আছেন। বাকিরা এখনো পলাতক। সবাইকে আইনের আওতায় এনে দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি।

আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম অবশ্য তেমন কিছু বললেন না। শুধু জানালেন, গতকাল রাতে তাঁর ঘুম হয়নি। আবু সাঈদকে খুব মনে পড়ছে।

বাড়ির ভেতরে ইটের আধা পাকা নতুন ঘরটি ঘুরিয়ে দেখিয়ে বাবা বললেন, আবু সাঈদের পড়ার ঘর ছিল না। আলাদা করে ঘর তুলতে চাইতেন। তাঁর বাবা একটি ঘরের কাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ অর্ধেক থাকতে আবু সাঈদ মারা যান। ঘরটি ঠিক করে তাঁর মা-বাবা থাকছেন। মা মনোয়ারা বেগম একটি ব্যাগ থেকে আবু সাঈদের ব্যবহার করা শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি বের করে দেখালেন। আবার ব্যাগে ভরে রাখলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ