বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশে পাওয়া গেছে একটি সুইসাইড নোট। সেখানে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের দায়ী করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সরদারপাড়া এলাকার আপন লেডিস হোস্টেলের নিজ কক্ষ থেকে জান্নাতুল ফেরদৌস টুম্পার (২৩) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চাপুইর গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে ‘রেজওয়ান’, ‘নিহা’, ‘দীপ্ত’ ও ‘ফাহিম’ নামে চারজনের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন টুম্পা।
সুইসাইড নোটে টুম্পা লেখেন, ‘আমি সবকিছু ভুলে বাঁচতে চেয়েছিলাম রেজওয়ান। আমি আমার মা-বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যেতে চেয়েছিলাম। শেষমেষ আমি পেরে উঠতে পারতাসি না রেজওয়ান। তুমি আমার ভালোবাসা, স্বপ্ন, সুখ সব নিয়ে গেছ রেজওয়ান। আমি তোমাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করেছি, তার ফল আমি গত এক বছর ধরে ভোগ করতেছি। সুইসাইড করলে জাহান্নামেও জায়গা হবে না এই ভয়ে হলেও বাঁচতে চাইছি। আমার এই সুন্দর জীবনটা তুমি জাহান্নাম থেকে অধম বানায় দিছ। নিহা মেয়েটার জন্য আমার জীবন অর্ধেক নষ্ট হইসে। বাকি অর্ধেক তুমি আর তোমার বন্ধুরা দীপ্ত, ফাহিম করছে। তোমরা ৪ জন আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।’
বাবা-মায়ের উদ্দেশে টুম্পা লেখেন, ‘আম্মা-আব্বা আমাকে মাফ করে দিবেন। আমি আপনাদের ভালো মেয়ে হতে পারি নাই। আপনাদের মেয়ে অনেক কিছু সহ্য করছে। আমি বাঁচতে চাইছিলাম কিন্তু ওরা আমাকে বাঁচতে দেয় নাই। আমাকে আপনারা মাফ করে দিয়েন। ইতি আপনাদের মেয়ে টুম্পা।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, হোস্টেল কক্ষে দীর্ঘ সময় দরজা বন্ধ থাকার পর সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানান। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে রাতেই মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
রংপুর মহানগর পুলিশের তাজহাট থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার চ্যাটার্জী বলেন, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করা হয়েছে। সেটি টুম্পার নিজের হাতে লেখা কি না, তা যাচাই করা হচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ বা মামলা করতে চাচ্ছে, তবে এখনো দায়ের করা হয়নি।