গত বছর ২৪’ এর আজকের দিনে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ ছিল প্রায় অচল। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো রংপুরেও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ জন নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও অনেকে।
দিনটি ছিলো শুক্রবার, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার পর থেকেই রংপুরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সেই থমথমে অবস্থা থেকে ১৮ জুলাই মডার্ণ মোড়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে মারা যান অটোচালক মানিক মিয়া। এই দুইজনের মারা যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিগুণ ক্ষোভ নিয়ে ফুঁষে উঠেন আন্দোলনকারীরা। পুরো নগরীতে ছিল এক থমথমে অবস্থা। পূর্ব থেকেই ঘোষণা ছিল জুমার নামাজের পর জিলা স্কুলের সামনে গায়েবানা জানাজা আদায় করা হবে। এমন প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজের পরপরই ধীরে ধীরে মানুষ জমায়েত হতে থাকেন জিলা স্কুলের আশেপাশে।
অপরদিকে, প্রশাসনের প্রস্তুতিও অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুন বেশি ছিল। জুমার নামাজের পর সেই গায়েবানা জানাজা করতে না পেরে বিক্ষোভে ফেটে পরে আন্দোলনকারীরা। এরপরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ ছড়িয়ে পরে রংপুরের নিউ মার্কেট, সিটি বাজার ও টাউনহল চত্বর এবং জিলা স্কুলের দিকে। এরপরে বিকেল ৩টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বিশাল বিশাল বিক্ষোভ মিছিলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়ে রাজপথে নামেন। মূহূর্তেই গোটা নগরী উত্তাল হয়ে ওঠে।
সেদিন নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে বের হওয়া অসংখ্য মিছিল শাপলা চত্বর, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, সুপার মার্কেট, রাজা রামমোহন মার্কেট, জেলা পরিষদ মিনি সুপার মার্কেট, সিটি মার্কেটসহ প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিলা স্কুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। নগরীতে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি। তখন পুলিশ বাহিনীর শত শত সশস্ত্র সদস্য আর্মড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) নিয়ে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিলের বিপরীত দিক থেকে আক্রমণাত্মকভাবে ছুটে আসছিল।
বিকেল ৪টার দিকে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। তখন পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। কয়েকঘণ্টা ধরে চলে সংঘর্ষ। সেই সংঘর্ষে গুলিতে নিহত হন ৪ জন। নিহতরা হলেন— শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির, সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন, ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম ও স্বর্ণশিল্পী মুসলিম উদ্দিন মিলন। আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। এই রণক্ষেত্র অবস্থা রাতঅবধি চলতে থাকে।
এদিকে পোস্টমোর্টেম ছাড়াই দাফন হয়েছিল সব লাশ। সরকার পতনের পর আদালতের আদেশে লাশ উত্তোলন করে পোস্টমোর্টেম করা হয়েছিলো। আজ এক বছর হয়ে গেলেও স্বজনহারা মানুষজনের আহাজারি কিন্তু কমেনি। আজও ছেলের জন্য কেঁদে ওঠে মায়ের মন।